বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভারত কোন্‌ পথে? – বারীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৯৩৬).pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারত কোন্ পথে?

সে ধনরত্ন ও গরিমা তো হিন্দু মুসলমানকে ঐ অবসাদ ও মৃত্যু হতে বাঁচাতে পারে নাই। আমরা যে তিলে তিলে মরছিলাম, আপনাতে আপনি সঙ্কুচিত হয়ে চলেছিলাম তার নিশ্চিত ধ্রুব লক্ষণ আমাদের সঙ্কীর্ণতা, অনুদারতা, ব্যর্থ আর্য্যত্বের গর্ব্ব এবং আস্ফালন, যার ফলে আমরা জগতের প্রাণদায়ী স্পর্শ থেকে জাত ধর্ম্ম বাঁচিয়ে ক্রমশঃ নিজের সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মাঝে সরে পড়ছিলাম। বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্বন্ধ হারিয়ে এরকম করে আত্মসর্ব্বস্ব হয়ে কোন জাতিই দীর্ঘকাল বাঁচে না।

 ইংলণ্ড ও য়ুরোপ তখন জীবন্ত বলে—মহামানব নরনারায়ণের সজীব প্রাণবান অঙ্গ বলে স্বতই জগতের ধনরত্নরূপ রুধির আপনার অঙ্গে টেনে নিয়ে নিজেদের সঞ্জীবিত করে তুলেছিল। শরীরের যে অংশ গলিত ও মৃত সে অংশ থেকে রক্তধারা সরে গিয়ে জীবন্ত অংশকেই আশ্রয় করে। সজীব জাতির দ্বারা দুর্ব্বল ও নির্জীব জাতির এই সাময়িক পরাজয় ও শোষণকে ভয় করো না, এটা চির দিন কখন চলতে পারে না। যা’ তোমার কাছ থেকে আজ অপহৃত হচ্ছে তা’ দশগুণ হয়ে ফিরে আসবে এক দিন; কারণ মানবজাতির শরীর এক অখণ্ড বস্তু, রক্তধারা বা ধনরত্ন শরীরের যে অংশেই সচল থাক তা’ পরিণামে’ গোটা শরীরটাকেই সঞ্জীবিত ও পুষ্ট করে, একাঙ্গকেই মাত্র করে না। লক্ষ্মী চঞ্চলা; ব্যবসায়ে, বাণিজ্যে, কৃষিতে, কলায়, শিল্পে ও রাষ্ট্রে তাঁকে সচল (in circulation) রাখলেই লক্ষ্মী বাড়েন এবং সেই সিসৃক্ষু মানব সমাজকে আশ্রয় করে থাকেন। বদ্ধ জলের মত রুদ্ধ সঞ্চিত ঐশ্বর্য্য জাতির মৃত্যুর কারণ হয়।

 লক্ষ্মী যে জাতিকে সাময়িক উপেক্ষায় ছেড়ে চলে যান, যে অধোগামী জাতি জীবনের ধারা থেকে বঞ্চিত হয়, তারও এই অপচয় স্থানুত্ব ও অধোগতি পরিণামে কল্যাণই প্রসব করে। কারণ একটি জাতি বা সমাজেরও আছে মাটির ধর্ম্ম ও স্বভাব। সেই মাটিই অধিক ফলপ্রসূ হয়

৩০