পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ লাগলে আইনের দিক থেকে ভারতীয়রা কখনো সুবিচার পেত না। এর ফলে শেষটায় অন্য কোনো উপায় না দেখে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে দিল। রাস্তায়, ট্রামে, রেলে তারা ইংরেজদের অত্যাচার অবিচার আর মুখ বুজে সহ্য করত না। মনে পড়ে আমাদের কলেজের একটি ছেলে ভালো বক্সিং জানত, সে সেধে সেধে সাহেবপাড়ায় গিয়ে টমিদের সঙ্গে মারামারি করে আসত। ভারতীয়দের এই পরিবর্তিত মনোভাবের ফল হাতে হাতে পাওয়া গেল। ইংরেজরা ভারতীয়দের সমীহ করে চলতে শুরু করল। লোকে বলাবলি করতে লাগল ইংরেজ শক্তের ভক্ত, নরমের যম। এই মনোভাবই বাঙলাদেশে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ভিত্তি। উপরোক্ত ঘটনাগুলি স্বভাবতই আমার রাজনৈতিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিল, কিন্তু তখনো আমার মনে সঠিক কোনো মত গড়ে ওঠেনি। এজন্য মহাযুদ্ধের অভিজ্ঞতার দরকার ছিল।

১৯১৪ সালের জুলাই মাসে অসুখে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছি। কাগজে যুদ্ধের খবর পড়ি। আর যোগীঋষিদের সম্বন্ধে আমার নবলব্ধ অভিজ্ঞতার কথা ভাবি। এ অবস্থায় আমার নিজের এতদিনের সব ধারণা এবং প্রচলিত মতবাদগ‍ুলি ভালো করে খতিয়ে দেখবার সুযোগ পেলাম। নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম—দেশের শাসনভার দুভাগে ভাগ করে, এক ভাগ বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে, আর এক ভাগ নিজেদের হাতে রাখা—এ কি সম্ভব? না, আমাদের কর্তব্য শাসনভার সম্পূর্ণ নিজেদের হাতে রাখা, কিংবা সম্পূর্ণ অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া? এ প্রশ্নের জবাবের জন্য আমাকে বিশেষ ভাবতে হয়নি। ভারতবর্ষকে যদি অন্য সব সভ্যদেশের সমকক্ষ হতে হয় তবে তাকে তার মূল্যও বহন করতে হবে, দেশরক্ষার গুরুদায়িত্ব এড়িয়ে

৯৪