পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিকে। ক্ষণেকের জন্য আমার মনে একটু অনুশোচনা দেখা দিল, ঠিক করলাম বি.এ.তে ভালো ফল করতেই হবে।

বি.এ.তে দর্শনে অনার্স নিলাম—আমার বহুকালের ইচ্ছা এইবার পূর্ণ হল। লেখাপড়ায় এবার সত্যিই খুব মনোেযোগ দিলাম। আমার কলেজ-জীবনে এই বোধ হয় প্রথম পড়ায় রস পেলাম। দর্শন পড়ে আমি যা লাভ করলাম তার সঙ্গে দর্শন সম্বন্ধে আমায় ছোটোবেলার ধারণার কোনো মিল ছিল না। স্কুলে পড়বার সময়ে ভাবতাম দর্শন পড়লে জীবনের মূল সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। দর্শন অধ্যয়নকে সে সময়ে আমার কাছে এক ধরনের যৌগিক প্রক্রিয়া বলেই মনে হত। দর্শন পড়ার ফলে কোনোরকম তত্ত্বজ্ঞান লাভ না করলেও আমার মনন-ক্ষমতা আগের চাইতে বেড়ে গেল, সব কিছুই বিচার করে দেখতে শুরু করলাম। পাশ্চাত্য দর্শনের গোড়ার কথাই সংশয়বাদ—কেউ কেউ বলেন এর শেষও সংশয়ে। পাশ্চাত্য দর্শন কোনো কিছুকেই নির্বিবাদে গ্রহণ করতে রাজী নয়— যুক্তিতর্কের সাহায্যে তার দোষগণ বিচার করে তবে গ্রহণ করে— এক কথায়, মনকে সংস্কারমুক্ত করে। এতকাল বেদান্তকে অভ্রান্ত বলে মেনে এসেছি, এখন মনে প্রশ্ন জাগল, বাস্তবিকই বেদান্ত অভ্রান্ত কি না। মননচর্চার খাতিরে জড়বাদের স্বপক্ষে প্রবন্ধ লিখতে শ‍ুরু করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই দলের অন্য সকলের সঙ্গে আমার বিরোধ লাগল। এই প্রথম আমার খেয়াল হল ওরা কতখানি গোঁড়া ও সংস্কারাচ্ছন্ন। অনেক জিনিসই ওরা নির্বিবাদে মেনে নেয়—কিন্তু যে সত্যিকারের সংস্কারমুক্ত সে কখনোই ভালো করে যাচাই না করে কোনো জিনিসকে সত্য বলে মানবে না।

প্রচুর উৎসাহ নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল।

৯৬