পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারি যে আমার কার্যকলাপ তাঁদের সম্প‍ূর্ণ মনোমত হয়নি, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই-এ না নামলেই তারা খুশি হতেন। কলকাতা ছেড়ে যাওয়া যখন স্থির করি তখন তাঁদের খবর পর্যন্ত দিইনি, অথচ কিছুকাল আগেই তাদের সঙ্গে দিনরাত্রি ফাটিয়েছি, তাঁদের সমস্ত পরিকল্পনায় যোগ দিয়েছি। ইতিমধ্যে সেই ছোটো গোষ্ঠী শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রধান সভ্যেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হলেও থাকতেন একই আস্তানায়। প্রত্যহ বিকেলে বাড়ি বা অন্যান্য ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রেরা এসে জুটতেন আলাপ-আলোচনার জন্য। ঘরোয়া প্রচারের উদ্দেশ্যে হাতে-লেখা মুখপত্রও প্রকাশ করা হত। বিভিন্ন বিষয়ে সভ্যদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার বিশেষ ঝোঁক ছিল ধার্মিক ও নৈতিক দিকে, সুতরাং গীতাপাঠ স্বভাবতই এই বৈকালিক আসরের নিয়মিত বন্দি হয়ে দাঁড়াল।

ঘরবাড়ি ও আরামের শয্যা ছেড়ে যেদিন গ‍ুর‍ু খুঁজতে বেরিয়েছিলাম সেদিনকার আমি যে হালের ঘটনার পর মনের দিক থেকে অনেক বদলে গেলাম সেটা সহজেই বোঝা যাবে। আচমকা ঝড়ের মতন পরিবর্তন এসে সমস্ত ওলট-পালট করে দিল। কিন্তু ঝড়ের আগেও তলে তলে পরিবর্তন চলেছিল আমার অজ্ঞাতসারে। প্রথমত আমার মন ঝুঁকছিল সমাজসেবার দিকে। দ্বিতীয়ত সমস্ত খামখেয়ালীপনা সত্ত্বেও নৈতিক দঢ়তা আমার মধ্যে ক্রমশই স্থান লাভ করছিল। সুতরাং যেদিন আকস্মিক সঙ্কটে আমার সামাজিক কর্তব্যবোধে টান পড়ল সেদিন আমাকে হার মানতে হয়নি। অবিচলিতভাবে কর্তব্যর সম্মুখীন হয়েছি, মাথা পেতে নিয়েছি প্রতিফলের বোঝা। সমস্ত কুণ্ঠা ও সংশয় মুহূর্তে কোথায় ভেসে গেল জানি না। অতঃপর

১০৪