পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিং কর্তব্যম? লেখাপড়ার রাস্তা একরকম বন্ধ, কারণ কোথায় কখন কী ভাবে আরম্ভ করব জানি না। বহিস্কার করা হয়েছিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য, অতএব সেটা সারাজীবনের শাস্তিই হয়ে দাঁড়াল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যে দয়াপরবশ হয়ে আবার লেখাপড়া শ‍ুর‍ু করার সযোগ করে দেবেন তারও কোনো স্থিরতা নেই। বিদেশ যাত্রার সম্পর্কে বাবা-মাকে ইশারা জানিয়ে দেখলাম বাবা তার ঘোর বিরোধী। কপালের কলঙ্ক না ঘুচিয়ে বিদেশযাত্রা চলবে না। অর্থাৎ আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, তারপর যা কিছু।

সুতরাং আমার কাজ হল ধৈর্য ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বিচারের প্রতীক্ষায় থাকা। সময়টাও কাটানো চাই। খাতাপত্র সরিয়ে পুরোদমে সমাজসেবায় লাগলাম। সেকালে উড়িষ্যায় কলেরা ও বসন্তের মহামারীর উৎপাত ছিল প্রবল। ডাক্তার ডাকার সঙ্গতি অধিকাংশেরই নেই, যাদের আছে তাদের পক্ষে ডাক্তারের উপর নার্স জোটানো অসম্ভব। হস্টেলে বা মেসে কলেরা দেখা দিলে রোগীকে ফেলে সবাই চম্পট দিয়েছে এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ লিওনার্ড রজার্সকৃত গবেষণার ফলে স্যালাইন ইঞ্জেকশন আবিষ্কৃত হবার আগে কলেরা ছিল অতি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সৌভাগ্যক্রমে একদল ছাত্র বাড়ি বাড়ি গিয়ে শ‍ুশ্র‌ূষা করত, তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল আমার পুরনো বন্ধু। আমি সানন্দে তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। কলেরা বা বসন্ত জাতীয় মারাত্মক রোগের দিকেই আমাদের বিশেষ ঝোঁক ছিল, তবু অন্যান্য রোগেও যে আমাদের সাহায্য না মিলতো এমন নয়। স্থানীয় সরকারী হাসপাতালের কলেরা ওয়ার্ডেও ডিউটি দিতাম আমরাই, কারণ শিক্ষিত নার্সের সেখানে বন্দোবস্ত ছিল না। শ‍ুশ্র‌ূষার ভার ন্যস্ত

১০৫