পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিনাৱা হবার অপেক্ষায় বসে বসে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম, আমার শক্তিকে কাজে লাগাবার একটা পথ না পেলে বাঁচি কী করে? ঠিক সে সময় ৪৯তম বাঙালী রেজিমেণ্টে ভরতি চলছে। য়ুনিভার্সিটি ইন‍্স্টিটিউটে এক ফৌজ ভরতির সভায় গিয়ে প্রচুর উৎসাহ সঞ্চয় করা গেল। পরদিন চুপচাপ বিডন স্ট্রীটের আফিসে স্বাস্থ্যপরীক্ষার কামরায় গিয়ে ধর্না দিলাম। ফৌজের স্বাস্থ্যপরীক্ষা অতি জঘন্য ব্যাপার, লজ্জাবোধের ধারকাছ দিয়েও ঘেঁষে না। আমি অবিচলিতভাবে পরীক্ষা দিলাম। আর সব পরীক্ষা পেরোবো জানা ছিল, ভয় ছিল শুধু চোখ সম্বন্ধে, কারণ দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট সরল ছিল না। আই. এম. এস. অফিসারটি ছিলেন ভারতীয়, তাঁকে অনেক অনুনয় বিনয় করলাম যে আমাকে উপযুক্ত বলে চালিয়ে দিন। কিন্তু তিনি সখেদে জানালেন যে চোখ পরীক্ষা করার জন্য আমাকে অন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাঙলায় বলে যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। দ্বিতীয় ডাক্তার, মেজর কুক, চোখের সম্বন্ধেই আবার বিশেষ খুঁৎখুঁতে। অন্য সব পরীক্ষায় পাশ করেও, চোখের বেলায় আমি তলিয়ে গেলাম। ফৌজে যোগ দেওয়া হল না, ভগ্নহৃদয়ে বাড়ি ফিরলাম।

শোনা গেল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা এবার প্রসন্ন হয়েছেন, কিন্তু একটা কলেজ খুঁজে বার করতে হবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে ভরতি হতে পারি। বঙ্গবাসী কলেজ আমাকে ভরতি করতে রাজী হল, কিন্তু দর্শনে অনার্সের বন্দোবস্ত সেখানে ছিল না। অতএব স্থির করলাম স্কটিশ চার্চে গিয়ে হাজির হব। একদিন সকালবেলা কোনো পরিচয়পত্রের অপেক্ষা না রেখে সিধে প্রিন্সিপাল ডক্টর আরকিউহার্টের ঘরে ঢুকে বল্লাম আমি বহিস্কৃত ছাত্র, কিন্ত‌ু

১১২