পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বদলে গেছি নিজেই জানি না। শ‍ুধু যে পরিবেশের সঙ্গে খাপখাওয়াতে অসুবিধা হয়নি তা নয়, সত্যিকারের আনন্দ পেয়েছিলাম। এই ট্রেনিং আমার কী যেন একটা অভাব পূর্ণ করল, আমার আত্মবিশ্বাস আরো দঢ় হল। সৈনিক হিসাবে আমাদের কতকগ‍ুলি অধিকার দিল, যেগ‍ুলি ভারতীয় হিসাবে পাওয়া যেত না। ভারতীয় হিসাবে আমাদের কাছে ফোর্ট উইলিয়মের দরজা ছিল বন্ধ, কিন্ত‌ু সৈনিক হিসাবে সেখানে ঢুকতে পেতাম, এবং প্রথম যেদিন রাইফেল আনবার জন্য ফোর্টে আমাদের প্রবেশ, সেদিন একটা আশ্চর্য তৃপ্তির অনুভূতি হয়েছিল, যেন আমাদের নিজেদের কোনো বস্ত‌ু থেকে আমাদের এতদিন বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল, এবার সেই অধিকার পেয়েছি। শহরের মধ্য দিয়ে রুটমার্চগ‍ুলোও ভালো লাগত, কারণ তাতে নিজেদের জাহির করার একটা আনন্দ ছিল। পুলিশ ও অন্যান্য যেসব সরকারী লোকেদের লাঞ্ছনা গঞ্জনায় আমরা অভ্যস্ত তাদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার সুখটা পেতাম পুরোমাত্রায়।

সারা থার্ড ইয়ারটা কাটল পল্টনগিরির উত্তেজনার মধ্যে। ফোর্থ ইয়ারে উঠে সত্যিকারের লেখাপড়া আরম্ভ হল। ১৯১৯ সালের বি. এ. পরীক্ষায় ফল ভালো হলেও আশানুর‍ূপ হল না। দর্শনে ফার্স্ট ক্লাস জুটল, কিন্তু স্থান পেলাম দ্বিতীয়। আগেই বলেছি দর্শন সম্বন্ধে আমার মোহ অনেকটা কেটে এসেছিল। এম. এ.তে দর্শন পড়ার ইচ্ছা আদৌ ছিল না। দর্শনে বিচারবুদ্ধি খোলে, সন্দেহবাদ বাড়ে, চিন্তাকে সংহত করে, কিন্তু আমার সমস্যার সমাধান কই? নিজের সমস্যার সমাধান হয় নিজের দ্বারাই। এ সমস্ত চিন্তা ছাড়া আরো কারণ ছিল। গত তিন বৎসরে আমার মনেও রুপান্তর হয়ে গিয়েছে। স্থির করলাম এম. এ.তে পরীক্ষামূলক মনস্তত্ত্ব

১১৭