পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তেমন গুরুতর দাঁড়ায়নি, তবু এই ইংরিজি ঔদ্ধত্যে আমাদের গায়ে জ্বালা ধরে গিয়েছিল। একটা মজার জিনিস জাহাজে থাকতে আবিষ্কার করা গেল, সেটা হচ্ছে ভারতের বাইরে আসার পর অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানদের ভারতপ্রীতি। গত য়ুরোপের কাছে আসে দেশ, অর্থাৎ ভারতবর্ষ, তাদের টানে তত বেশি করে। ইংলণ্ডে তাদের ইংরেজ বলে পার হবার জো নেই, তার উপর আত্মীয়স্বজন নেই, ঘরবাড়ি নেই, বন্ধুবান্ধব নেই। সুতরাং যতই ভারতবর্ষ থেকে দুরে পড়ে ততই বোধ করতে থাকে ভারতবর্ষের টান।

সিটি অফ ক্যালকাটার চেয়ে ঢিমে তালের জাহাজ খুঁজে পাওয়া শক্ত। যেখানে ত্রিশ দিনে তার টিলবারি পৌছনোর কথা সেখানে লাগল সাঁইত্রিশ দিন। বিলেতের কয়লাখনিতে ধর্মঘটের ফলে সিটি অফ ক্যালকাটা সুয়েজখালে কয়েদ হয়ে ছিল কয়েকদিন। যাই হোক, পথে অনেক বন্দরে নামা গিয়েছিল এটাই সান্ত্বনা। পাঁচ সপ্তাহের একঘেয়ে জীবনকে একটু সরস করে তোলার জন্য আশ্রয় নিতে হয়েছিল হাজার রকমের হাসিঠাট্টার। একজন সহযাত্রীর উপর তার স্ত্রীর হুকুম ছিল বীফ কখনো ছোঁবে না। একদিন মাট‍্ন কোপ্তা কারি বলে তাকে বীফ খাইয়ে দিল আরেকজন প্যাসেঞ্জার। বেচারা প্রবল ফূর্তির সঙ্গে খেয়ে রাৱো ঘণ্টা পরে যখন আবিষ্কার করল যে সে বীফ খেয়েছে, তখন তার কী দঃখ! আরেকজন প্যাসেঞ্জারকে প্রেয়সীর হকুমে রোজ চিঠি লিখতে হত। দিনরাত্রি তার কাজ ছিল প্রেমের কবিতা পড়া আর তার বাগ‍্দত্তার কাহিনী অনর্গল বলে যাওয়া। আমাদের ভালো লাগ‍ুক আর নাই লাগ‍ুক, শুনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। একদিন বলেছিলাম যে তার প্রিয়ার মুখশ্রী গ্রীক ছাঁদের, তাতে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।

১২২