রামকৃষ্ণ বলেছিলেন কয়েকজন অন্ধের হস্তীবর্ণনার কথা। যে অঙ্গে যে স্পর্শ করেছে সে সেই অনুসারেই রূপ বর্ণনা করেছে হাতির, অপরের সঙ্গে প্রবল তর্ক করেছে। আমার মতে বাস্তবতার অধিকাংশ ধারণাই আংশিকভাবে সত্য, আসল প্রশ্ন হচ্ছে কোনটাতে সত্যের ভাগ সবচেয়ে বেশি। আমার দৃষ্টিতে বাস্তবতার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রেম। কি বিশ্বজগতের কি মানবজীবনের, উভয়েরই মলে প্রেম। এই ধারণাও যে অপূর্ণ তা জানি, কারণ প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা কী তা বলতে পারব না, পরম সত্যকে জানার স্পর্ধা নেই, যদি বা সে জানা মানুষের সাধ্যায়ত্ত হয়। তবু সমস্ত অপূর্ণতা সত্ত্বেও আমার কাছে এই ব্যাখ্যাই সবচেয়ে সত্য, এবং এই জ্ঞানই পরম জ্ঞানের সবচেয়ে নিকট।
প্রশ্ন উঠবে বাস্তবতার মূলে প্রেম একথা পাই কোথায়। মানতেই হবে যে আমার নির্ণয় পদ্ধতি মোটেই সনাতন নয়। আমার সিদ্ধান্ত এসেছে কিছুটা জীবনের বুদ্ধিগত বিচার থেকে, কিছুটা বুদ্ধিবহির্ভূত প্রত্যক্ষ বোধ থেকে, কিছুটা ব্যবহারিক বিবেচনা থেকে। আমার চারদিকে দেখতে পাই প্রেমের লীলা; নিজের ভিতরেও দেখি তারি প্রকাশ। নিজের পূর্ণতার জন্য প্রেমের প্রয়োজন বোধ করি, জীবনকে গড়ে তোলার একমাত্র ভিত্তি পাই প্রেমে। বিভিন্ন চিন্তায় আমাকে একই সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়।
উপরে বলেছি যে মানবজীবনের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রেম। জীবনে প্রেমের এত অভাব যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হয়তো প্রবল আপত্তি উঠবে। কিন্তু এটা স্ববিরোধী কথা নয়, মূল ভিত্তির এখনো পরিপূর্ণ প্রকাশ হয়নি, স্থানকালের মধ্যে নিত্যই তার প্রকাশ বিস্ফারমাণ। বাস্তবের মূলে প্রেম, বাস্তবের মতোই সে নিত্য পরিবর্তনশীল।
এই বিকাশের প্রকৃতি কি? প্রথমত, এর গতি কি অগ্রগতি?