পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিতীয়ত, এই গতির পশ্চাতে কি কোনো ধ্র‌ুব নিয়ম আছে? এই বিকাশ হচ্ছে অগ্রগতিশীল। এটা একটা অন্ধ বিশ্বাসের কথা নয়। প্রকৃতির ও জীবনের পর্যবেক্ষণের দ্বারা বোঝা যায় যে চতুর্দিকেই অগ্রগতি চলছে। প্রগতি সরাসরি এক লাইনে চলেছে এমন নয়। তার পথে বাধা আসছে নিয়তই। কিন্তু মোটের উপর অর্থাৎ দীর্ঘকালীন দৃষ্টিতে দেখতে গেলে প্রগতির অস্তিত্ব অস্বীকার করা চলে না। এই বুদ্ধিগত বিচার ব্যতীত বুদ্ধিবহির্ভূত প্রত্যক্ষ জ্ঞান রয়েছে যে কালের গতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা এগিয়ে চলেছি। জৈব ও নৈতিক কারণে প্রগতির প্রতি বিশ্বাস রাখাও আমাদের পক্ষে অনিবার্য প্রয়োজন।

যেমন বাস্তবে প্রকৃতি জানা ও বর্ণনা করার জন্য নানা চেষ্টা হয়েছে তেমনি প্রগতির নিয়মকে জানার জন্যও। এজাতীয় কোনো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয় না, কারণ তার মধ্য দিয়ে সত্যের কিছুটা হদিস মেলে। হিন্দু সাংখ্যদর্শন সম্ভবত বিবর্তন প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার প্রথম প্রয়াস। এই সমাধানে আধুনিক মন সন্তুষ্ট হয় না। আধুনিক যুগে বিবর্তনের বহু ব্যাখ্যা বা বর্ণনা চালু হয়েছে। স্পেন্সর প্রমুখ অনেকের মতে বিবর্তন হচ্ছে সরল থেকে জটিলের দিকে গতি। ফন হার্টমান্ ও অন্যান্য অনেকের মতে জগৎ এক অন্ধ শক্তির দ্বারা চালিত, সুতরাং তার অন্তর্নিহিত কোনো নিয়মের সন্ধান করা বৃথা। বর্গ‍সঁর মতে বিবর্তন হচ্ছে সৃষ্টিশীল, তার মোড়ে মোড়ে পরিবর্তন, এবং সেই পরিবর্তনকে পূর্ব থেকে জানা যায় না।

অপরপক্ষে হেগেলীয় ধারণায় বিবর্তন প্রক্রিয়ার প্রকৃতি বাহ্যজগতে ও অন্তর্জগতে উভয়েই দ্বান্দ্বিক। সংঘাত ও সমাধানের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রগতি। প্রতি ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে, সমাধানেই তার

১৫৬