পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সামাজিক কোনো ব্যাপারেই মুখ্য অংশ গ্রহণ করেনি। এর কারণ নানাভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। একদল বলেন, বাঙলা ও অন্যান্য প্রদেশের যে শাসকদের পরাজিত করে ইংরেজরা এদেশে রাজ্য স্থাপন করেছিল তাঁরা সকলেই ছিলেন মুসলমান ধর্মাবলম্বী, তাই মুসলমানেরা ইংরেজ শাসন ও সংস্কৃতি সন্বন্ধে বহুকাল পর্যন্ত অত্যন্ত বিরুদ্ধভাবাপন্ন ছিল। আর একদল বলেন যে, ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হবার বহু আগে থেকেই মুসলমান অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙ্গন ধরেছিল। তাছাড়া প্রথম প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান ও সত্যতা সম্বন্ধে মুসলমানদের ধর্মগত আপত্তিও ছিল। এর ফলে বৃটিশ শাসনের প্রথম যুগে মুসলমানদের প্রাধান্য সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়েছিল। আমি এই দুটি মতের কোনোটাই মানতে রাজি নই, কারণ সাৱা ভারতে মুসলমানদের সংখ্যার অনুপাতে দেশের রাষ্ট্রীয় জীবনে তাদের প্রাধান্য ইংরেজ আমলে বা তারও আগে কখনো কমেনি বলেই আমার ধারণা। আজকাল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক বিভেদের কথা প্রায়ই প্রচার করা হয় সেটা নেহাৎই কৃত্রিম, অনেকটা আয়র্ল‍্যাণ্ডের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যাণ্ট বিরোধের মতো—এবং এর জন্য যে আমাদের বর্তমান শাসকেরাই বহুল পরিমাণে দায়ী সে কথা অস্বীকার করবার উপায় নেই। ইংরেজরা এদেশে আসবার আগে দেশের শাসনতন্ত্র মুসলমানদের হাতে ছিল বললে সম্পূর্ণটা বলা হয় না, কারণ দিল্লীর মোগল বাদশাহের সময়েই বলুন বা বাঙলার মুসলমান নবাবদের আমলেই বলুন, হিন্দু-মুসলমান পরস্পর সহযোগিতা না করলে শাসনকার্য চালানো কোনোমতেই সম্ভব ছিল না। মোগল বাদশাহ এবং মুসলমান নবাবদের মন্ত্রী ও সেনাপতিদের মধ্যে অনেক হিন্দুও ছিল। ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রসারও সম্ভব হয়েছিল হিন্দু

১৫