পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্থির করে উঠতে পারছিলেন না যে এদেশে তাঁরা সম্পূর্ণ দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থাই সমর্থন করবেন, না পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রচার করবেন, তখন রাজা রামমোহন রায় মুক্তকণ্ঠে পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বপক্ষে রায় দেন। তাঁর আদর্শ টমাস ব্যাবিংটন মেকলেকে কতখানি প্রভাবান্বিত করেছিল মেকলের বিখ্যাত ‘মিনিট অন এডুকেশন'এ তার পরিচয় পাওয়া যায়। রামমোহন রায়ের আদর্শকেই সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়। রামমোহন তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বহুদিন আগেই বুঝেছিলেন পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনকে গ্রহণ না করলে দেশের উন্নতি অসম্ভব।

অবশ্য এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব শ‍ুধু, যে ব্রাহ্মসমাজেই নিবদ্ধ ছিল তা নয়। যাঁরা ব্রাহ্মদের সমাজদ্রোহী ও ধর্মবিরোধী বলে মনে করতেন তাঁরাও স্বদেশের প্রাচীন সংস্কৃতিকে পুনর‍ুজ্জীবিত করবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছিলেন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে সমতালে চলবার অন্য ব্রাহ্ম এবং অন্যান্য প্রগতিপন্থী সম্প্রদায় যখন পাশ্চাত্য সভ্যতার সার জিনিসগ‍ুলি আহরণ করতে ব্যস্ত তথন অধিকতর গোঁড়া সম্প্রদায়ের লোকেরা হিন্দুসমাজের মহিমা কীর্তন করতে ব্যগ্র হয়ে পড়লেন এবং প্রচার করতে লাগলেন হিন্দুসমাজে সবই অভ্রান্ত। এমন কি তাঁরা এও দাবি করলেন যে পাশ্চাত্য সভ্যতা যেসব নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে আজ গর্ব করছে সেসবই ভারতের প্রাচীন মুনিঋষিরা বহুদিন আগেই আবিষ্কার করে গেছেন। এইভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে অত্যন্ত গোঁড়া সম্প্রদায়ও কর্মতৎপর হয়ে উঠেছিল। এদের মধ্যে অনেকেই সাহিত্যিক হিসেবে যথেষ্ট নাম করেছিলেন—শশধর তর্কচূড়ামণির নাম তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। কিন্তু এঁদের রচনার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল খৃস্টান মিশনারিদের

২(৪৪)
১৭