পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়া ভালো কি না বলা মুশকিল। এই জাতীয় স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত শঙ্খলাবদ্ধ হলেও, যে শিক্ষা এখানে দেওয়া হত ভারতীয়দের দিক থেকে তার উপযোগিতা বিশেষ ছিল না। বাইবেল-এর উপরে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত এবং বাইবেল পড়ার ধরনও ছিল অত্যন্ত নীরস। বুঝি বা না বুঝি পুর‍ুতদের মন্ত্রপাঠের মতো আমাদের বাইবেল মুখস্ত করতে হত। সাত বছর ধরে দিবারাত্র এইভাবে বাইবেল পড়লেও বাইবেলের রস প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম আরো অনেক বছর পরে, যখন আমি কলেজে পড়ি।

আমাদের পাঠ্যতালিকা এানভাবে তৈরি হত যাতে মনেপ্রাণে আমরা ইংরেজ হয়ে উঠতে পারি। গ্রেটবৃটেনের ইতিহাস ও ভূগোল সম্বন্ধে আমার যতখানি জ্ঞান ছিল ভারতবর্ষ সম্পর্কে তার সিকিভাগও ছিল কি না সন্দেহ। ভারতীয় নামও আমরা উচ্চারণ করতাম বিদেশীদের মতো বিকৃতভাবে। ল্যাটিন শব্দর‍ূপ মুখস্ত করতে করতে আমরা গলদ‍্ঘর্ম হয়ে উঠতাম, অথচ পি. ই. স্কুল ছাড়বার আগে সংস্কৃত ধাতুর‍ূপ সম্বন্ধে আমাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। গানের ক্লাসে আমরা শিখতাম ডো রে মি ফা; সা রে গা মা নয়। পাঠ্য বইয়ে পড়তাম ওদেশের ইতিহাসের গল্প, র‍ূপকথা—নিজের দেশের ছিটেফোঁটাও তাতে থাকত না। বলাই বাহুল্য দেশী কোনো ভাষাই সেখানে শেখানো হত না, আমরাও দেশী স্কুলে ঢোকবার আগে পর্যন্ত মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ হয়েই বেরিয়েছি। অবশ্য এসব কারণে যে আমাদের স্কুলজীবন নিরানন্দে কেটেছে তা নয়। বরং উল্টোটাই হয়েছে। প্রথম কয়েক বছর তো এখানকার শিক্ষা আমাদের উপযোগী কি না সে সম্বন্ধে আমরা মোটেই সচেতন ছিলাম না। যা আমাদের শেখানো হত সাগ্রহে তাই শিখতাম এবং স্কুলের আবহাওয়ার সঙ্গে

২৬