পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভালোবাসতাম। আমাদের সামাজিক রীতিনীতি বা ধর্মবিশ্বাসে এঁরা কখনো হস্তক্ষেপ করতেন না।

এইভাবে কয়েক বছর আমাদের বেশ স্বচ্ছন্দেই কেটে গিয়েছিল— স্কুলের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের আমরা বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু ক্রমেই যেন ছন্দপতন ঘটতে লাগল। কোথায় কি যে ঘটল, যার ফলে এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা ক্রমেই আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠল। স্থানীয় কোনো ঘটনাই এর কারণ, না দেশের নবজাগ্রত রাজনৈতিক চেতনারই এটা একটা ঢেউ, সে আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখাই ভালো।

নানা কারণে এই রাজনৈতিক জাগরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল, কিন্তু তার ফলে যে সংঘর্য দেখা দিয়েছিল তার জন্য আমরা ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। এতদিন পর্যন্ত আমরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে বাস করছিলাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করতে লাগলাম এই দুটি জগতের মধ্যে একটা বড় অসংগতি রয়ে গেছে। পরিবার ও সামাজিক জীবন নিয়ে একটি জগৎ, যেটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয়। আর, স্কুল, যেটা সম্পূর্ণ বিলিতীভাবাপন্ন না হলেও তার কাছাকাছি যেত—আর একটি জগৎ। আমরা জানতাম আমরা ভারতীয় বলে প্রাইমারি ও মিডল স্কুল পরীক্ষা দিতে পারলেও স্কলারশিপ পরীক্ষা দেবার অধিকার আমাদেৱ নেই—যদিও বাৎসরিক পরীক্ষাগ‍ুলিতে আমরাই সাধারণত সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করতাম। অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান ছেলেরা ভলাণ্টিয়ায় কোর-এ যোগ নিতে পারত, বন্দুক ব্যবহার করতে পারত, কিন্তু আমাদের এসব অধিকার ছিল না। এইসব ছোটোখাটো ব্যাপার থেকেই আমাদের চোখ খুলে গেল, বুঝলাম এক স্কুলে পড়লেও আমাদের অর্থাৎ ভারতীয়দের ভিন্ন চোখে দেখা হয়। ইংরেজ বা

২৯