পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁকে ভালো না বেসে পারেনি। বাপমায়ের প্রভাব ছেলেমেয়েদের উপরে অলক্ষিতে কতখানি কাজ করে সেটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়লে ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে।

শিক্ষকদের মধ্যে একজনই মাত্র আমার মনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তিনি হলেন আমাদের প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস। প্রথম দর্শনেই তাঁর প্রখর ব্যক্তিত্বে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স বারোর কিছু বেশি হবে। এর আগে আর কাউকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করেছি বলে মনে পড়ে না। বেণীমাধব দাসকে দেখবার পর শ্রদ্ধা কাকে বলে মনেপ্রাণে অনুভব করলাম। কেন যে তাঁকে দেখলে মনে শ্রদ্ধা জাগত তা বোঝবার মতো বয়স তখনো আমার হয়নি। শ‍ুধু বুঝতে পারতাম তিনি সাধারণ শিক্ষকের পর্যায়ে পড়েন না। মনে মনে ভাবতাম, মানুষের মতো মানুষ হতে হলে ওঁর আদর্শেই নিজেকে গড়তে হবে। আদর্শের কথা বলতে গিয়ে পি. ই. স্কুলের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার বয়স তখন বছর দশেক হবে। বড়ো হয়ে আমরা কে কী হতে চাই সে সম্বন্ধে শিক্ষকমশাই আমাদের প্রবন্ধ লিখতে দিয়েছিলেন। আমার বড়দাকে জজ্, ম্যাজিস্ট্রেট, কমিশনার, ব্যারিস্টার, ডাক্তার, এঞ্জিনীয়ার, কার পদমর্যাদা কতখানি সে সম্বন্ধে প্রায়ই বলতে শুনতাম। শুনে শুনে এ সম্পর্কে আমার যা ধারণা জন্মেছিল তাই দিয়ে কোনোরকমে এক প্রবন্ধ খাড়া করলাম, তাতে বোধ হয় আমি কমিশনার আর ম্যাজিস্ট্রেট দুই-ই হতে চেয়েছিলাম। প্রবন্ধটি পড়ে শিক্ষকমশাই আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে বললেন প্রথমে কমিশনার হয়ে তারপর ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাইলে লোকে পাগল বলবে। আমার বয়স তখন খুবই কম, কাজেই কোন পেশার কতখানি মর্যাদা কিছুই বুঝতাম

৩৭