পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না। তবে বাড়িতে সবাই যা বলাবলি করত তা থেকে বুঝেছিলাম আই. সি. এস্. এর মতো চাকরি আর হয় না।

প্রধান শিক্ষকমশাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নিচে কোনো ক্লাস নিতেন না, তাই দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠে কবে তাঁর কাছে পড়তে পারবো সেই শুভদিনের অপেক্ষায় অধীরভাবে দিন কাটাতাম। অবশেষে সেইদিন এল, কিন্তু আমার ভাগ্যে তাঁর কাছে বেশিদিন পড়া ছিল না, কারণ কয়েকমাসের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন। কিন্তু অল্পদিনের জন্য পড়ালেও যাবার আগে তিনি আমার মনে মোটামুটি একটা নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে দিয়ে গেলেন— বুঝতে শিখলাম জীবনে নৈতিক আদর্শটাই সবচেয়ে বড়ো জিনিস। পাঠ্য বইয়ে পড়েছিলাম—

পদমর্যাদা—মোহরের পিঠে ছাপ তো শ‍ুধ‍ু,
আসল সোনা সে আর কেউ নয়, মানুষ নিজে।

এর মর্ম তিনিই আমায় বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। এতে আমার চরিত্রগঠনে কতখানি যে সাহায্য হয়েছিল বলবার নয়— কারণ তখন আমার মধ্যে যৌনচেতনার প্রথম উম্মেষ দেখা দিয়েছে— বয়ঃসন্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেটা স্বাভাবিকভাবে সকলের মধ্যেই আসে।

প্রধান শিক্ষকমশাই তাঁর অনুগত ও গণমুদ্ধে ছাত্রদের কাছ থেকে যখন বিদায় নিলেন সেই দৃশ্য এখনো আমার চোখের সামনে ভাসছে। যখন ক্লাসে ঢুকলেন, পরিষ্কার দেখা গেল তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছেন। আন্তরিক আবেগে তিনি বলতে শুরু করলেন, “বেশি আমার কিছু বলবার নেই, শ‍ুধু, প্রার্থনা করি ভগবান তোমাদের মঙ্গল

৩৮