পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কর‍ুন...” এর পর আর কোনো কথা আমার কানে যায়নি। কাস্নায় আমার ভেতরটা গুমরে উঠছিল, চোখের জল যেন আর বাগ মানতে চায় না। কিন্তু চাৱদিকে অত ছেলে, কাঁদলে সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে, তাই অনেক কষ্টে কান্না চেপে গেলাম। ক্লাস ছুটি হয়ে গেলে, ছেলেরা দলে দলে বেরিয়ে যেতে লাগল। আমিও বেরোলাম। প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের ঘরের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি দেখলাম তিনি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষণেকের জন্য দুজনের চোখাচোখি হল। ক্লাসে এতক্ষণ কোনোরকমে কান্না চেপে ছিলাম, এবার আর পারলাম না, চোখে জল এসে গেল। তিনি নেমে এসে আমাকে সান্ত্বনা দিলেন, বললেন আবার আমাদের দেখা হবে। জীবনে এই প্রথম আমি বিদায়ব্যথায় কেঁদেছিলাম এবং অনুভব করেছিলাম একমাত্র বিদায়ের সময়েই আমরা বুঝতে পারি প্রিয়জনদের আমরা কতখানি ভালবাসি।

পরের দিন ছাত্র ও শিক্ষকদের তরফ থেকে একটি বিদায় সভার ভায়োজন করা হল। বক্তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমার বক্তব্য আমি কী করে গ‍ুছিয়ে তুলতে পেয়েছিলাম জানি না, কারণ কান্নায় তখন আমার গলা বুজে আসছিল। একটা জিনিস দেখে আমি মনে বড় ব্যথা পেয়েছিলাম— ব্যাপারটা যে কত বড় দুঃখের তা যেন অনেকেই বুঝতেই পারছিল না। সকলের বলা হয়ে গেলে যখন প্রধান শিক্ষকমশাই তাঁর বক্তব্য বলতে শ‍ুর‍ু করলেন, তাঁর প্রত্যেকটি কথা আমার কানে পৌঁছেছিল। তিনি বলেছিলেন, তিনি যখন প্রথম কটকে আসেন, তিনি কল্পনাই করতে পারেননি যে তাঁর জন্য সকলের মনে এতখানি প্রীতি সঞ্চিত ছিল। তারপর তিনি কী বলেছিলেন জানিনে। আমি শ‍ুধু, তাঁর আবেগোজ্জ্বল মুখের দিকে আচ্ছন্নভাবে তাকিয়ে ছিলাম। সে মুখে এমন একটি দীপ্তি ছিল যা একমাত্র কেশবচন্দ্র

৩৯