পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করবার ভার নিয়েছেন তাঁর শিষ্যেরা। কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তিনি যে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তাঁর শিষ্যেরা তা বই বা রোজনামচার আকারে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এইসব বইয়ের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হল চরিত্রগঠন ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্পর্কে তাঁর সহজ সরল উপদেশাবলী। বারবার তিনি বলেছেন, আত্মসংযম বিনা আধ্যাত্মিক উন্নতি অসম্ভব, একমাত্র অনাসক্তির মধ্য দিয়েই মুক্তি আসতে পারে। রামকৃষ্ণ অবশ্য নতুন কিছু বলেননি—হাজার হাজার বছর আগে উপনিষদই প্রচার করেছে, পার্থিব প্রলোভন ত্যাগই অমরত্ব লাভের একমাত্র উপায়। রামকৃষ্ণের উপদেশাবলী এত জনপ্রিয় এবং হৃদয়গ্রাহী হবার কারণ, রামকৃষ্ণ যা উপদেশ দিতেন নিজের জীবনেও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তাঁর শিষ্যদের মতে তিনি এইভাবে আধ্যাত্মিক উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিলেন।

রামকৃষ্ণদেবের উপদেশের সার কথা—কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ। তিনি বলতেন এই দুটি প্রলোভন ত্যাগ করতে না পারলে আধ্যাত্মিক উন্নতি অসম্ভব। যৌনকামনাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে যাতে সব স্ত্রীলোক সম্বন্ধেই মনে মাতৃভাব জাগে।

অল্পদিনের মধ্যেই আমি রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের একদল ভক্ত জুটিয়ে ফেললাম। এদের মধ্যে সহৃৎচন্দ্র মিত্রও ছিলেন। স্কুলে বা স্কুলের বাইরে, যেখানেই হোক সুযোগ পেলেই আমরা এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দিতাম। অনেক সময়ে দল বেঁধে দূরে কোথাও বেড়াতে চলে যেতাম, এতে বেশ খানিকক্ষণ আলোচনা করবার সযোগ পাওয়া যেত। ক্রমে আমাদের দল বেশ ভারি হয়ে উঠল। দলে একটি গাইয়ে ছেলেকে (হেমেন্দ্র সেন) পাওয়া গেল—বিশেষ করে ভক্তিমুলক গান সে চমৎকার গাইত। দেখা গেল ঘরে বাইরে সকলেই আমাদের,

৪৫