পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পর্যন্ত না মন সম্পূর্ণ সমাধিস্থ হয়। কখনো কখনো নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনকে সমাধিস্থ করা হত। সবচেয়ে কষ্টকর ছিল মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রক্রিয়া। নানারকম কৃচ্ছসাধনের ব্যবস্থাও ছিল—যেমন নিরামিষ আহার, প্রত্যূযে শয্যাত্যাগ, শরীরের শীতগ্রীষ্মানুভূতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

এসবই অত্যন্ত গোপনে সমাধা করতে হত—সে ঘরের লোকের কাছেই হোক বা বাইরের কার‍ুর কাছেই হোক। রামকৃষ্ণের একটি প্রিয় উপদেশ ছিল: বনে বা নির্জন কোনো জায়গায়, ঘরে বা মনে মনে— যেখানেই হোক এমনভাবে যোগ অভ্যাস করবে যাতে বাইরে থেকে কেউ টের না পায়। জানবে শুধু তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুরা যারা নিজেরা যোগ অভ্যাস করে, আর জানবে সহ-যোগীরা।

এইভাবে কিছুদিন যোগ অভ্যাস করবার পর আমরা পরস্পরের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখতে লাগলাম। রামকৃষ্ণ একটা জিনিস বিশেষ করে সকলকে বলতেন। যোগে সিদ্ধি লাভ করলে অনেকেই অলৌকিক শক্তির অধিকারী হন—কিন্তু সেইজন্য অহঙ্কারে আত্মহারা হয়ে কেউ যদি আত্মপ্রচার বা শক্তির অপব্যবহার করতে শ‍ুর‍ু করেন তবে তার ফল অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে। আধ্যাত্মিক উন্নতির চরমশিখরে উঠতে হলে এই প্রলোভন ভ্যাগ করতেই হবে। মাসের পর মাস যোগ করবার পরও আমার মধ্যে এই ধরনের কোনো অলৌকিক শক্তি অনুভব করিনি, তবে আগের চাইতে আমার আত্মবিশ্বাস ও আত্মসংযম অনেক বেড়ে গিয়েছিল, মানসিক শান্তিও অনেকটা ফিরে পেয়েছিলাম। কিন্তু এর বেশি কিছু নয়। ভাবলাম হয়তো একজন গ‍ুর‍ুর অভাবেই সাধনা আর এগোচ্ছে না—অনেককেই বলতে শ‍ুনতাম কিনা গ‍ুর‍ু বিনা যোগসাধনা কখনো সফল হয় না। অগত্যা গ‍ুর‍ুর সন্ধানে মন দিলাম।

৪(৪৪)
৪৯