পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমাদের দেশে সংসারত্যাগী যোগীরা অনেকেই পরিব্রাজকের জীবনযাপন করেন কিংবা তীর্থস্থানগুলিতে ঘুরে বেড়ান। কাজেই হরিদ্বার, বারাণসী, পুরী (বা জগন্নাথ) কিংবা রামেশ্বরম—যে কোনো তীর্থে এদের দেখা মেলে। পুরীর কাছাকাছি বলে কটকেও এই ধরনের সাধুসন্ন্যাসীর ভিড় লেগেই থাকত। এই সাধুসন্ন্যাসীদের মধ্যে আবার দুটো শ্রেণীবিভাগ আছে—একদল হল আশ্রম বা মঠবাসী, আর একদল তারা কোন দল বা সম্প্রদায়ভুক্ত নয়, সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত প্রকৃতির। আমাদের কাছে অবশ্য কোনো বাছবিচার ছিল না। শহরে কোনো সাধুসন্ন্যাসী এসেছে একবার খোঁজ পেলেই হল, সবাই ছুটতাম তার দর্শন নিতে। এইভাবে কত বিচিত্র ধরনের লোকের যে দেখা পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। এদের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগত সত্যিকার সংসারবিমুখ নির্লিপ্তপ্রকৃতির সাধুদের। এরা কখনো চেলা খুঁজে বেড়ায় না, এবং কার‍ুর কাছ থেকে অর্থও কখনো গ্রহণ করে না। যদি কাউকে এরা শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তবে তাকে এদেরই মতে সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ চুকিয়ে দিতে হবে। বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ভুক্ত এবং বিবাহিত সাধুদের আমার মোটেই ভালো লাগত না। এদের প্রধান উদ্দেশ্যই হল ধনী ও সম্ভ্রান্ত লোকদের শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করা, যাতে দরকার মতো তাদের শোষণ করাও চলে। একবার এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী এলেন কটকে। নব্বুই কি তারও বেশি তাঁর বয়স। ভারতবর্ষের একটি বিখ্যাত আশ্রমের অধ্যক্ষ তিনি। কটকের একজন নামকরা ডাক্তার এঁর শিষ্য ছিলেন। তাঁকে দেখবার জন্য সাৱা কটক শহরে যেন ধুম পড়ে গেল। দর্শনপ্রার্থীদের মধ্যে আমরাও ভিড়ে পড়লাম। যথাস্থানে পৌঁছে সাধুজীকে প্রণাম করবার পর আমরা সকলে তাকে ঘিরে বসলাম। অত্যন্ত প্রসন্নভাবে আমাদের

৫০