পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বললেন। তাঁর ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। পরে তাঁর কয়েকজন শিষ্য স্তোত্রপাঠ করলেন। পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে আমরা শুনলাম। বিদায় দেবার সময়ে তিনি আমাদের তাঁর ছাপানো উপদেশাবলী দিয়ে সেগ‍ুলো যথাযথভাবে পালন করতে বলে দিলেন। আর সকলের কথা জানিনা, আমি তো মনে মনে সংকল্প করলাম উপদেশগ‍ুলো ঠিকমতো পালন করব। প্রথম উপদেশ হল— মাছ, মাংস বা ডিজ্ঞ কোনোটাই খাওয়া চলবে না। আমাদের বাড়িতে আবার নিরামিষের চাইতে আমিষটাই বেশি চলত, কাজেই এই উপদেশ পালন করা খুব সহজ হয়নি-যথেষ্ট বাধা পেতে হয়েছে, বকুনি খেতে হয়েছে। কিন্তু শত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও আমি উপদেশ পালন করেছিলাম। দ্বিতীয় উপদেশ, দৈনিক কতকগুলি স্তোত্র পাঠ করা। এটা সহজেই সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এর পরের উপদেশটাই ছিল একটু গোলমেলে—বাপমায়ের বাধ্য হওয়া। সকালে উঠে প্রথমেই বাবা মাকে প্রণাম করতে হবে। আগে কখনো বাবা মাকে এভাবে প্রত্যেক দিন প্রণাম করিনি। তাছাড়া নির্বিচারে বাপমায়ের সব কথাই মেনে নেওয়ার কোনো সার্থকতা আছে বলে আমি বিশ্বাস করতাম না। বরঞ্চ আমার আদর্শের পথে সব রকম বাধাকেই, সে বাপমায়ের কাহ থেকেই আসুক বা অন্য কোনো দিক থেকেই আসুক, তুচ্ছ করর বলে দৃঢ়সংকল্প ছিলাম। যাই হোক, উপদেশ মানতেই হবে, কাজেই একদিন সকালবেলা চোখমুখ বুজে কোনোৱকমে সটান গিয়ে বাবাকে প্রণাম করে ফেললাম। আজও পরিষ্কার মনে পড়ে—এই আকস্মিক ব্যাপারে বাবা কী রকম অপ্রস্ত‌ুত হয়ে পড়েছিলেন। আমার এই অদ্ভ‌ুত আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি, কিন্তু আমি একটি কথাও না বলে ঠিক যেমন এসেছিলাম তেমনি মুখ বুজে

৫১