পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাঝে কথাবার্তা শুনতাম, কিন্তু সে শোনা পর্যন্তই। ১৯০৮ সালে প্রথম যখন রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বোমা ব্যবহার করা হয়, দেশের চারদিকেই বেশ একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। আমাদের মধ্যেও সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। আমি তখন পি. ই. স্কুলে পড়ি। প্রধানশিক্ষয়িত্রী বোমা ছোঁড়ার বিরুদ্ধে আমাদের খুব উপদেশ শোনালেন। ব্যাপারটা অবশ্য অল্পদিনের মধ্যেই চাপা পড়ে গেল। সেই সময়ে বঙ্গবিভাগ নিয়ে খুব গোলমাল চলছিল। বঙ্গবিভাগের প্রতিবাদে শহরে মিছিল বেরোত। একই সঙ্গে স্বদেশী জিনিস ব্যবহারের জন্য আন্দোলনও চলেছিল। আমরা স্বভাবতই এসব ব্যাপারে কাজে না হোক মনে মনে খানিকটা ঝুঁকেছিলাম। কিন্তু আমাদের বাড়িতে রাজনীতির প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কাজেই রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমৱা করতাম কি, খবরের কাগজ থেকে বিপ্লবীদের ছবি কেটে কেটে পড়ার ঘরে টাঙিয়ে রাখতাম। একদিন আমাদের এক আত্মীয় আমাদের বাড়ি বেড়াতে এলেন। তিনি ছিলেন পুলিশ অফিসার। আমাদের ঘরে ঢুকে বিপ্লবীদের ছবি দেখে তিনি বাবাকে সাবধান করে দিলেন, ফলে স্কুল থেকে ফিরে এসে আমরা দেখলাম সেসব দুরি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আমাদের কী রকম খারাপ লেগেছিল বুঝতেই পারেন।

১৯১১ সালের ডিসেম্বর অবধি রাজনৈতিক চেতনা আমার এত কম ছিল যে সম্রাট পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেক সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আমার মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও জাগেনি। সাধারণত ইংরিজি রচনায় আমিই সবচেয়ে বেশি নম্বর পেতাম, কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় আমার ভাগ্যে পুরস্কার জুটল না। বড়দিনের

৫৪