পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিংবা আমাদের চেয়ে নিচু জাতের ছিল বলেই মা আপত্তি করেছিলেন, কিংবা হয়তো বাইরে খেলে অসুখবিসুখ হতে পাৱে এরকম আশঙ্কা করেছিলেন। আমরাও বাস্তবিকই বাইরে খুব কমই খেতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে মায়ের আপত্তি আমার কাছে অত্যন্ত অসঙ্গত বলে মনে হল। আমি মায়ের নিষেধ অমান্য করেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলাম—এবং এতে কেমন একটা অদ্ভ‌ুত আনন্দও যেন অনুভব করেছিলাম। পরে যখন ধর্মচর্চা ও যোগসাধনা উপলক্ষে অনেকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ত, অনেক জায়গায় যেতে হত—তখন প্রায়ই বাবা-মার নিষেধ অমান্য করতে হয়েছে। কিন্তু তার জন্য মনে কিছুমাত্র দ্বিধাও জাগেনি, কারণ তখন বিবেকানন্দের আদর্শ আমি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছি—বিবেকানন্দ বলতেন আত্মোপলব্ধির জন্য সব বাধাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করতে হবে। ভূমিষ্ঠ হয়েই শিশ‍ু যে কাঁদে, তার কারণ আর কিছুই নয়, যে বাধানিষেধের গণ্ডির মধ্যে সে ভূমিষ্ঠ হয় তার বিরদ্ধে তার স্বাধীনসত্তা বিদ্রোহ করে ওঠে।

আমার স্কুলজীবনের কথা ভাবলে বুঝতে পারি অনেকেই আমাকে সে সময়ে অত্যন্ত খামখেয়ালী, বেয়াড়া প্রকৃতির বলে মনে করতেন। আমার অভিভাবকেরা এবং স্কুলের শিক্ষকেরা সকলেই খুব আশা করেছিলেন প্রবেশিকা পরীক্ষায় আমি খুব ভালো করব, স্কুলের নাম রাখবো। কিন্তু আমি যখন লেখাপড়া ছেড়ে সাধুসন্ন্যাসীদের নিয়ে মেতে উঠলাম তখন তাঁদের নিরাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর রইল না। আমার উপর বাবা-মায়ের অনেক আশা-ভরসা ছিল, কাজেই আমার এই পরিবর্তনে তাঁদের অবস্থা কী রকম দাঁড়িয়েছিল সেটা সহজেই অনুমেয়। আমি এসব জিনিসকে মোটেই আমল দিতাম না, আমার কাছে আদর্শটাই তখন সবচেয়ে বড়। কোনোরকম বাধানিষেধই আমি

৬০