পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু লোকে কী ভাবে না ভাববে তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতাম না। তখনকার দিনে কলেজের ছাত্রদের মধ্যে এরকম অনেক বিভিন্ন ধরনের দল দেখা যেত। রাজা ও ধনীর দুলাল এবং তাদের মোসাহেবদের নিয়ে এমনি একটি দল ছিল। এরা সেজেগ‍ুেজ বেড়াত আর পড়া পড়া খেলত। আর একটি দল ছিল গ্রন্থকীটদের—পুরু কাচের চশমাপরা শান্তশিষ্ট, সবোধস‍ুশীল গোছের, এই ছেলেরা পড়া ছাড়া জগতে আর কিছুই জানত না। তৃতীয় একটি দলে ছিল অনেকটা আমাদের মতোই একদল পরম উৎসাহী ছেলে—নিজেদের তারা রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের মানসপুত্র বলেই বোধ হয় মনে করত। এই কটি দল ছাড়া একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল ছিল। এদেৱ সম্বন্ধে বেশির ভাগ ছেলেই বিশেষ কিছু জানত না। আজকের প্রেসিডেন্সির সঙ্গে সেযুগের প্রেসিডেন্সি কলেজের অনেক প্রভেদ ছিল। অধ্যাপকমণ্ডলীতে সে সময়ে জগদীশচন্দ্র বসু এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতো মনীষীদের উপস্থিতি এর একটা কারণ। সরকারী কলেজ হলেও প্রেসিডেন্সির ছাত্ররা মোটেই সরকারভক্ত ছিল না। এর কারণ, লেখাপড়ায় ভালো হলেই যে-কোনো ছেলে প্রেসিডেন্সিতে ঢুকতে পারত। সি. আই. ডি. মহলে প্রেসিডেন্সির ছাত্রদের অত্যন্ত বদনাম ছিল বলে শোনা যায়। ইডেন হিন্দু হস্টেলকে তো বিপ্লবীদের প্রধান আড্ডা বলে ধরা হত। এজন্য পুলিশ প্রায়ই এসে হস্টেল খানাতল্লাসী করে যেত। কলেজে প্রথম দুবছর রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ ভক্তদের প্রভাব আমার উপর খুব বেশি ছিল। দলের অধিকাংশই ছিল ছাত্র এবং এদের নেতা ছিল মেডিক্যাল কলেজের দুজন ছাত্র—সূরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুগোলকিশোর আঢ্য। এরা রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের আদর্শকে

৭১