পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতেন—এইসব স্বগতোক্তিতে তিনি তাঁর দ্বিতীয় সত্তার নাম দিয়েছিলেন ‘মানিক’। তাঁর বিচারের সময়ে পুলিশ অনেকগুলি কাগজপত্রে এই মানিকের সঙ্গে কথোপকথনের প্রতিলিপি পায়। যে পুলিশ প্রসিকিউটর এটি প্রথম আবিষ্কার করে সে যখন উত্তেজনায় অধীর হয়ে হঠাৎ একদিন কোর্টে দাঁড়িয়ে ‘মানিক’ নামধারী এই নবাবিষ্কৃত ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা দাবি করেছিল সারা কোর্টে সেদিন হাসাহাসির ধুম পড়ে গিয়েছিল। তখনকার দিনে সকলেই বলাবলি করত যে অরবিন্দ বারো বছরব্যাপী ধ্যান করার জন্যই পণ্ডিচেরী গিয়েছেন। বারো বছর পূর্ণ হলে তিনি গৌতম বুদ্ধের মতো সিদ্ধিলাভ করে দেশ উদ্ধার করতে আবার কর্মজীবনে ফিরে আসবেন। অনেকেই এই কথা বিশ্বাস করত। বিশেষ করে যারা ভারত অলৌকিক শক্তি ছাড়া অন্য কোনোভাবে ইংরেজদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না তাদের কাছে এই কাহিনী তো প্রায় ধ্র‌ুবসত্যের মতো ছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হবার পর যখন প্রবল আন্দোলন শ‍ুরু হয় সে সময়ে অনেক অদ্ভ‌ুত গল্প শোনা যেত। চারদিকে রটে গেল ইংরেজদের সঙ্গে যেদিন আমাদের যুদ্ধ শ‍ুর‍ু হবে সেদিন কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গে একদল কম্বলধারী সন্ন্যাসী প্রবেশ করবেন। এই সন্ন্যাসীদের অলৌকিক শক্তির প্রভাবে ইংরেজ সৈন্যৱা স্থাণ‍ুর মতো দাঁড়িয়ে থাকবে, আর বিনাবাধায় আমাদের হাতে ক্ষমতা চলে আসবে। এই ধরনের কত রকম অসম্ভর কল্পনা যে সে সময়ে আমাদের মাথায় ঘুরত তার ঠিক নেই। কলেজে পড়বার সময়ে অরবিন্দর লেখা এবং চিঠিপত্র পড়ে তাঁর প্রতি আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সে সময়ে অরবিন্দ ‘আর্য' নামে একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকার মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর আদর্শ প্রচার

৭৭