পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নাথের মধ্যে সেই প্রাণস্পর্শ ছিল না যা অরবিন্দর অতি সাধারণ কথার মধ্যেও পাওয়া যেত; অরবিন্দ বলতেন, “আমি চাই তোমরা বড় হয়ে ওঠো, তোমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য নয়, স্বদেশের জন্য, যাতে জগতের অন্য সব স্বাধীন দেশের মাঝে ভারতবর্ষও সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে। তোমাদের মধ্যে যারা দীনদরিদ্র, আমি চাই শত দুঃখ দারিদ্র্যের মধ্যেও যেন তারা দেশের সেবা করতে না ভোলে। তোমাদের কাজের মধ্য দিয়েই দেশের উন্নতি, তোমাদেৱ বেদনাতেই দেশের মুক্তি।”

যতদিন পর্যন্ত রাজনীতিতে আমার ঝোঁক খায়নি ততদিন দুটো জিনিস নিয়ে আমি মত্ত ছিলাম—প্রথমত, ধর্মপ্রচারক দেখলেই নির্বিচারে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা, দ্বিতীয়ত, জনসেবার শিক্ষানবিশী করা। কলকাতায় বোধ হয় এমন কোনো ধর্মপ্রতিষ্ঠান ছিল না যার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ না ছিল। জনসেবার ব্যাপারেও আমার বেশ বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে সময়ে দক্ষিণ কলকাতায় অনাথ ভাণ্ডার নামে একটি দরিদ্র সেবা প্রতিষ্ঠান ছিল। জনসেবার উৎসাহে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আমাদের কাজ ছিল প্রতি রবিবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ এবং চালডাল সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা। এই কাজটা সাধারণত ছাত্রকর্মীদের উপরে দেওয়া হত। আমি ওদের দলে ভিড়ে ভিক্ষা করে বেড়াতে লাগলাম। সাধারণত চালটাই পাওয়া যেত। নিয়ম ছিল দিনের শেষে প্রত্যেককে অন্তত একমন থেকে দুমন পর্যন্ত চাল এনে দিতে হবে। প্রথম যেদিন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে বেরোলাম, এ ধরনের কাজে অনভ্যস্ততার দর‍ুন লজ্জায় আমার প্রায় মাথা কাটা যাবার উপক্রম হয়েছিল। আমার এই ভিক্ষা করে বেড়ানোর

৮০