পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক সপ্তাহে আমি যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম তাতে ভারতের সত্যিকার রূপটি আমার চোখে ধরা পড়েছিল যে, ভারতের গ্রামে গ্রামে শ‍ুধু নিদারুণ দারিদ্র্য, মৃত্যুর তাণ্ডবলীল, আর নিরক্ষতার অভিশাপ। সঙ্গে আমাদের জামাকাপড় বা বিছানাপত্র বলতে বিশেষ কিছু ছিল না, কারণ বহুদূর পথ পায়ে হেঁটে আমাদের পার হতে হত। পথে যা পেতাম তাই খেতাম, যেখানে হোক কোনোরকমে মাথা গ‍ুঁজে রাত কাটাতাম। আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছিল যখন দেখলাম গ্রামের লোকেরা আমাদের সহজভাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না আমাদের আসল উদ্দেশ্যটা কি। সরকারী লোক যে আমরা নই সেটা তারা বুঝেছিল, কারণ সরকারী কর্মচারীরা কস্মিনকালেও তাদের অসুখবিসুখে শ‍ুশ্র‌ূষা করতে এগিয়ে আসেনি। শহরের ধনী লোকেরাও তাদের সম্বন্ধে কখনো মাথা ঘামায়নি। গ্রামের লোকেরা শেষ পর্যন্ত সাব্যস্ত করল, নাম কেনাই আমাদের উদ্দেশ্য। এই ধারণা আমরা কোনোমতেই তাদের মন থেকে দূর করতে পারিনি।

কলকাতায় ফিরে এসে আবার সাধুসন্ন্যাসীদের নিয়ে মেতে উঠলাম। কলকাতা থেকে প্রায় ষাট মাইল দূরে একটি ছোট শহরে নদীর ধারে পাঞ্জাব থেকে আগত এক তরণ সন্ন্যাসী বাস করতেন। আমার বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারকে নিয়ে সুযোগ পেলেই আমি তার কাছে যেতাম। সন্ন্যাসীটি কখনো কার‍ুর বাড়িতে যেতে চাইতেন না। তাঁর আদর্শ ছিল বোধ হয়—

 আকাশটা ছাদ, ঘাসের বিছানা শয্যা;

 ভাগ্যে যা জোটে, তাই দিয়ে রোজ উদয়ের পরিচর্যা।

৮৪