পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/১০৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোম্বাই । বলিতে পারে ? মানবের ক্ষুদ্রবুদ্ধি, ক্ষুদ্রজ্ঞান, দর্শন বিজ্ঞান এখানে নীরব । এ রহস্য কখনও উদঘাটিত হইবে কিনা, তাহা মানুষ জানে না, কল্পনার বিচিত্ৰ লীলাময়ী সৌন্দৰ্য্য একটা ছবি আঁকে বটে, কিন্তু সে প্রত্যেকের নিজ মনের সংকীর্ণ কেন্দ্রে আবদ্ধ। সেই অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ডের অনন্ত মহিমাময়ের অনন্তদীপ্তি ও প্ৰতিভা—সে বিশালত্ব ক্ষুদ্র হৃদয়ে ধারণ করা অসম্ভব। সে দেশের পথিক এ পৰ্য্যন্ত ত আর ফিরিয়া আইসে নাই,- তাই কবি মনের দুঃখে গাহিয়াছেন, — The indiscovered country from whose Bourne no traveller returns." কোন তারকার পারে, কোন সুদূরে সে সোণার দেশ অনন্তরূপে, অনন্ত ঐশ্বৰ্য্যে জ্যোতিৰ্ম্ময়,-শাস্তির শ্যাম-স্নিগ্ধ কোমল পক্ষপুটে ঢাকা, তাহ। কে বুঝিবে, আর কেই বা বুঝাইবে ? সে বোধ অন্তরেন্দ্ৰিয়ের, বাহেন্দ্ৰিয়ের নহে,—তাই আমাদের ভাষা এখানে মূক । আমরা যখন ‘শব্বস্তম্ভ দর্শন করিতে গমন করিয়াছিলাম, সে সময়ে আমাদের সৌভাগ্যবশতঃ একটি বৃদ্ধের ও একটী শিশুর শব। এখানে আনীত হইয়াছিল। পৰ্বতোপরিস্থ এই শবস্তম্ভের স্থানটি একটী নীরব ও গম্ভীরভাবের পূর্ণতা-দায়ক স্থান। একদিকে সুনীল তরঙ্গ মুখরিত ফেনিল সমুদ্র কুসুম-স্তবক তুল্য। ফেণরাশি বক্ষে ধারণ করিয়া উন্মাদনৃত্যে বহিয়া চলিয়াছে--কি অনন্ত মহিমা জ্ঞাপক। দূরে - অতিদূরে—আরো দূরে অধীর আকাশ সমুদ্রকে চুম্বন করিতেছে— নীলিমায় নীলিমায় কি প্ৰাণের মিলন !—কি আবেগ-পূর্ণ হৃদয়ভরা গ্ৰীতির চুম্বন ! আর এদিকে বনস্পতিরাজি পাহাড়ের গায়ে গায়ে সরল উন্নতদেহে দণ্ডায়মান। প্ৰফুল্ল কুসুম-সৌরভিত বিটপী ছায়ার নিম্নে শবের আত্মীয়বর্গ যখন বিশ্রাম করিতে বসে, অলক্ষ্যে যখন নয়ন হইতে তপ্ত অশ্রু পতিত হইয়া ভূমিতে শুকাইয়া যায়, তখন প্ৰকৃতির প্রাণভরা প্ৰেমভরা হাসি, সমুদ্রের সেই উন্মাদ দানবের ন্যায় প্রচণ্ড তাণ্ডব কিছুতেই শান্তি দিতে পারে না। এ ব্যথা কেমন ? ইহার একমাত্র উত্তর “সেই জানে শোকে যার পুড়িছে হৃদয়।” হৃদয়ের ভিতরে একটা অবসাদের ছায়া লইয়া নানা কথা চিন্তা করিতে করিতে সেদিন বাসায় ফিরিয়া আসিলাম । , ዓ8¢