পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভ্ৰমণ আছে। কুম্ভমেলা যোগের সময় স্নান করিবার জন্য যাত্ৰিগণের মধ্যে একটা কোলাহল জাগিয়া ওঠে। পুলিশকৰ্ম্মচারিগণ নানারূপ চেষ্টা যত্ন । করিয়াও কোনরূপেই শান্তিসংস্থাপন করিতে পারেন না। কত লোক যে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হইয়া প্ৰাণত্যাগ করে তাহার ঠিক থাকে না । ১৮১৯ খ্ৰীষ্টাব্দে প্রায় ৪৫০ শত লোক ভিড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। প্রতি দ্বাদশ বৎসর অন্তর এখানে কুম্ভমেলা হয়--তখন এই অল্প পরিসর স্থানে ধৰ্ম্মলিপস্ লক্ষ লক্ষ যাত্রী অবগাহন করিয়া পুণ্যসঞ্চয় করিয়া থাকে। শাস্ত্ৰে লিখিত আছে যে কুম্ভমেলার সময় এস্থানে স্নান করিলে আর পুনর্জন্ম হয় না। প্রতি বৎসর চৈত্রসংক্রান্তিতেও এস্থানে মেলা হয় বটে কিন্তু কুম্ভমেলার মত তত লোক সমাগম হয় না। বাৰ্ষিক মেলার সময় এখানে সহস্ৰ সহস্ৰ অশ্বাদির খরিদবিক্রয় হয়। ব্ৰহ্মকুণ্ডের মধ্যে দেশদেশান্তরের। যাত্ৰিগণ মৃতদেহের অস্থি নিক্ষেপ করিয়া মৃতের পারলৌকিক মুক্তির পথ। সুপ্রিশস্ত করিয়া দেয়। যাহারা হরিদ্বার আসিতে পারেন না। তাহারা সচরাচর নিজ নিজ পাণ্ডাদের নিকট ডাকযোগে অস্থি ইত্যাদি পঠাইয়া দেন, পরে পাণ্ডাগণ উহা গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করে। । | এখানে গঙ্গার নিৰ্ম্মল সলিল মধ্যে বড় বড় মহাশৌল মৎস্যগুলিকে নিৰ্ভয়ে বিচরণ করিতে দেখিলাম—হরিদ্ধারে প্রাণীহত্যা নিষেধ। ইহাদের প্ৰতি কেহ কোনও অত্যাচার করে না বলিয়া মৎস্যেরাও মনুষ্য দেখিয়া কোনও রূপ ভীত হয় না-যাত্রীরা চিরা, মুড়ি, খই জলে ফেলিয়া দিতেছে আর শত শত মৎস্য নিৰ্ভয়ে আসিয়া তাহ খাইতেছে। কি সুন্দর দৃশ্য ! আমরা যে সেকালে তপোবনের চিত্রমধ্যে সমুদয় হিংস্ৰজন্তুর শান্তশিষ্ট স্বভাবের পরিচয় পাই, এই মৎস্যদের ব্যবহার দেখিলে তাহার সততা দৃঢ়ীভূত হয়, তুমি যদি হিংসা ভোল-—তুমি যদি প্ৰাণ দিয়া ভালবাসিতে শেখ তবে সে কেন ভালবাসিবে না ? প্রেম দিলেই প্ৰেম পাওয়া যায়। আমরা ১৯ বৎসর পূর্বে যখন এখানে আসিয়াছিলাম তখন এ স্থান গভীর জলপারিপূরিত ছিল—কিন্তু এখন চর পড়িয়া গিয়াছে এবং ঐ স্থানে অট্টালিকাদি নিৰ্ম্মিত হইতেছে। স্নান করিয়া পুনরায় কুশাবর্তঘাটে স্নান করিতে আসিলাম