পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রকৃতির এমন নয়নানন্দদায়ক দৃশ্য অতি অল্প তীৰ্থ স্থলেই দৃষ্ট হয়। এখানকার গঙ্গাতীরবর্তী দৃশ্য পরম রমণীয়, প্ৰভাতের সেই স্নিগ্ধশীতল নবীন সৌন্দৰ্য্য হইতে সন্ধ্যার ধূসরােন্ধকারে চতুর্দিক আবৃত। হওয়ার পূর্ব পৰ্য্যন্ত দেখিতে পাইবে ভক্তিপূর্ণ চিত্তে হিন্দু নরনারীগণ ধৰ্ম্মকাৰ্য্যে নিরত। সকলোরি মুখে এক স্বৰ্গীয় জ্যোতি বিরাজমান— কি যেন এক সুদুর্লভ রত্ন তাহারা পাইয়াছে, তাই তাহদের মুখে ত্ৰিদিবের হাসি-জগৎ সংসার তাহারা চায় না, তাহারা চায় সেই বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের রাজাধিরাজ মহা সম্রাটের কৃপা । হরিদ্বার শান্তি শ্ৰীতি ও ভক্তির পুণ্যসলিলে অভিষিক্ত। এখানে আসিলে সুদূর প্রাচীন ইতিহাসের কথা মনে পড়ে ; মনে পড়ে সেই ত্রিকালজ্ঞ মহর্ষিগণের পবিত্রতম স্তোত্র পাঠ ও ধৰ্ম্মনিরত ভাব। সন্ধ্যার সময় হরিদ্বারের শোভা অতুলনীয় ও অনির্বচনীয় হয়, তখন একদিকে গঙ্গাদেবীর আরতির মধুর ধ্বনি, সহস্ৰ সহস্ৰ কণ্ঠ-মিলিত-স্তোত্রারবে, সাধুমণ্ডলীর শঙ্খধ্বনিতে অপূর্ব গ্ৰীতির ভাব জাগিয়া উঠে, অন্যদিকে আবার নিৰ্ম্মল-সলিলা কলুষ-নাশিনী কল-নিনাদিনী । গঙ্গা-বক্ষে ও কি ফুটিয়া উঠিয়াছে ?—এ কি স্বপ্নপুরী –দেবাঙ্গনার কি ভুলক্রমে মণি-রত্ন-মালা ফেলিয়া গিয়াছেন নাকি ?--কেমন সুন্দর অসংখ্য দীপাবলি গঙ্গাবক্ষে প্ৰতিভাত হইয়া উঠিয়াছে। আধমানান্ধকারাবগুষ্ঠিত প্রদোষান্তে গঙ্গার তটে দাড়াইয়া তন্ময়চিত্তে এ শোভা দেখিতেছিলাম-পৰ্বতে পর্বতে শঙ্খ ঘণ্টাধ্বনি নিনাদিত হইতেছে, আর ভক্তকণ্ঠোথিত স্তোত্ৰধ্বনি উৰ্দ্ধে-জানিনা কোন অনন্তের অনন্ত-প্ৰান্তোপবিষ্টের চরণসমীপে—-গিয়া পহুছিতেছে ! কবি গাহিয়াছেন “কোন অদ্রি হিমাদ্রি সমান ?” সত্য সত্যই যখন নগাধিরাজের সৌর-কিরণ-মণ্ডিত শুভ্রতম ধবলগিরির শিখরের দিকে দৃষ্টি পতিত হয়, তখন উহা মনে পড়ে। আহা ! কি শান্তি ! আতি বড় পাপীর হৃদয়ও এখানে আসিলে ভক্তির পীযুষ-ধারায় । সিক্ত হয়। মনে হয় না যে আবার সংসারে ফিরিয়া আসি। হায়! যদি সেই অচিন্ত্য ও অনির্বচনীয় মহাপুরুষের ধ্যানে জীবনের অবশিষ্টাংশ কাটাইয়া