পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুলতান । লাগিল। প্ৰাতে গাড়ীর শব্দ শুনিতে পাইয়া অত্যন্ত উৎসাহে ১৫১৬ জন । একত্ৰ আসিতেছিল। ক্রমে Station নিকটবৰ্ত্তী হইলে কেহ কাহারও অপেক্ষা না করিয়া পথ-বিপথ না বাছিয়া ছুটিতে লাগিল। পরে এই লোকটা একা আসিয়া পৌছিয়াছে ; সঙ্গীদিগের অদৃষ্টে কি ঘটিয়াছে বলিতে পারে না। আমি কোন সময় গাড়ীতে উঠিয়াছি, তাহাই মনে নাই। আমার অত্যন্ত ক্ষুধা পাইয়াছে।” আমরা আমাদের সঙ্গে যাহা কিছু খাদ্য ছিল, তাহাঁই সিপাহিটিাকে খাইতে দিলাম। বলা বাহুল্য যে, আমরা তাহার দেশীয় বলিয়া কত কথাই যে বলিল, তাহা । বর্ণনাতীত। আমরা সুদূর বঙ্গ প্রদেশের এক প্ৰান্তের অধিবাসী, আর লক্ষ্মেী তাহার বাড়ী, তবু সে আমাদিগকে একদেশবাসী অর্থাৎ এক ভারতবাসী বলিয়া কতই না আনন্দ প্ৰকাশ করিতেছিল । আমরা ক্ৰমে অগ্রসর হইতে লাগিলাম, চারিদিকে পাহাড় শ্রেণী, উপত্যকা ও অধিত্যকার মধ্য দিয়া অগণিত স্রোতস্বিনীকুল কুলুকুলুরবে: বহিয়া চলিয়াছে। আমরা কখনো উদ্ধে, কখনও নিম্নে, কখনো বা পৰ্বতের পাশ্মদিয়া, কখন নদীর উপরিস্থিত সেতুর উপর দিয়া, কখন বা টনেল ( পৰ্ব্বতের সুরঙ্গ ) দিয়া ভুজঙ্গের মত আঁকিয়া বঁকিয়া চলিতে লাগিলাম। আমরা নৈসৰ্গিক শোভা সন্দর্শনে উৎফুল্লমানে এবং বিপদাপদ শঙ্কায় শঙ্কিত চিত্ত্বে অগ্রসর হইতে লাগিলাম। ক্ৰমে সূৰ্য্যদেব দিবসের কাৰ্য্য সমাপনান্তে অস্তাচলশায়ী হইবার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন,-মান-লোহিত জ্যোতি তরুশিরে লতা পল্লবে এবং দূরবর্তী পর্বত শেখরে নিপতিত হইয়া অপূর্ব সৌন্দৰ্য্য বিকীর্ণ করিতে লাগিল। আমাদের নয়ন-পথে বহু শ্বেতবর্ণ পর্বত পতিত হইতে লাগিল। হঠাৎ জব্বলপুরের নৰ্ম্মাদার শ্বেত পাহাড় বলিয়াই ভ্ৰম হইয়াছিল। তুষারাবৃত এই পাহাড়গুলি দূর হই৩ে বড়ই সুন্দর দেখাইতেছিল—যতই গাড়ী সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিল ততই দেখিলাম যে পর্বতের উপত্যকা, মাঠ, পপ সকলি বরফে শুভ্ৰাকৃতি ধারণ করিতেছে, দূর হইতে বিশাল সলিল-পূর্ণ সমুদ্রের ন্যায় জ্ঞান হইতে লাগিল। এক ইঞ্চি হইতে প্ৰায় এক ফুট পুরু বরফে ঢাকা রেলপথ দিয়া টেণখানা চের চের শব্দে চলিতে লাগিল । S •२२