পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্ৰিগণ ব্ৰহ্মার মন্দিরে ও সাবিত্রী পাহাড়ে সাবিত্রী ও সরস্বতী দেবীর মন্দিরে তঁহাদের মূৰ্ত্তি দর্শন করিয়া থাকেন। সাবিত্রী পাহাড়টি খুব উচু নহে ; পাহাড়ের উপর হইতে কানন-কুন্তলা প্ৰকৃতি দেবীর অনির্বচনীয় সৌন্দৰ্য্য হৃদয় ও মন বিমোহিত করিয়া ফেলে। অন্যান্য তীর্থ স্থানের সহিত এস্থানেরও বিশেষ পার্থক্য নাই, সেই একঘেয়ে ভাব—যাত্ৰিগণের গোলমাল-ধূলিধূসরিত পথ, স্বল্প জলপূৰ্ণ শুষ্কপ্রায় সরোবর, পাণ্ডাদের হৈ-চৈ সবই এক। নানা দেশের নানা শ্রেণীর স্ত্রী-পুরুষ ধৰ্ম্মকামনায় এখানে আগমন করিয়া সুদানতপণাদি করিয়া থাকেন। ব্ৰহ্মা। এ স্থানে যজ্ঞ । করিয়াছিলেন বলিয়া ব্ৰহ্মার মন্দিরই সর্বাগ্রে দর্শনীয়। আমরা পুষ্করের কথা বলিতে বলিতে আজমীরের কথা ভুলিয়া গিয়াছি। আজমীরে আমরা ঠিক বাসা ঠিক করিয়া এক দিবস তথায় অবস্থান করিয়াছিলাম। এখানকার সরাইগুলিও খুব সুন্দর। দিল্লী ও আগ্ৰা ব্যতীত ভারতের আর কোথাও এইরূপ সর্বাঙ্গসুন্দর সরাই দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না। এখানকার সরাই ঘর মুত্তিকানিৰ্ম্মিত নহে, প্রস্তরনিৰ্ম্মিত অট্টালিকা। এক একজন যাত্রীর জন্য এক একটী ভিন্ন ভিন্ন প্ৰকোষ্ঠ আছে। এইরূপ সুন্দর সুন্দর ঘরগুলির তুলনায় ভাড়াও অতি অল্প, দৈনিক দুই আনা হইতে চারি আনামাত্ৰ। ঘরে জিনিষ-পত্ৰাদি রক্ষা পূর্বক ভূত্যকে রাখিয়া কিংবা তালা চাবি লাগাইয়া গেলে কোনওরূপ আশঙ্কার কারণই থাকে না। এক সময়ে আজমীর যে প্ৰাচীন হিন্দুকীৰ্ত্তিকলাপ সমূহ দ্বারা ভূষিত ছিল, এখনও তাহার বহু চিহ্ন বিদ্যমান আছে। আজমীরের প্রাচীন নাম ইন্দ্রকোট। নগরের চতুর্দিকে মনোহর পর্বতশ্রেণী শোভমান থাকায় বড়ই সুন্দর দেখায়। এ স্থানে বহু মন্দির ও মসজিদ বিদ্যমান। আমরা সন্ধ্যার সময় আজমীর পহুছিয়ছিলাম, রাত্ৰিতে । আর কোথাও বাহির হইলাম না। পরদিন প্ৰত্যুষে নবেদিত অরুণের লোহিত কিরণ-সম্পাতে যখন চারিদিক হাসিতেছিল-সে সময়ে আমরা নগর দেখিতে বাহির হইলাম। আজমীর সহরটি অতি সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বাভাবিক সৌন্দৰ্য্যের সহিত ইংরেজরাজের কৃত্ৰিম শোভাসম্পদের সংমিশ্রণে ইহা পরম রমণীয় আকার ধারণ করিয়াছে। সর্ব