পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাশী । দেব-মন্দির বিরাজিত নাই। বৰ্ত্তমান সুবৰ্ণকলস ও স্বর্ণচুড়া-বিলম্বিত । বিশ্বেশ্বরের সুন্দর মন্দির মাত্র শতাধিক বর্ষ পূর্বে নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। এখন বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের অনতিদূরে ঔরঙ্গজেব কর্তৃক নিৰ্ম্মিত যে মসজিদ দৃষ্ট হয়, পূর্বে সেই স্থানেই বিশ্বেশ্বরের মন্দির বিদ্যমান ছিল। সেই মসজিদের পশ্চিমভাগের কারুকাৰ্য্যাদি দর্শন করিলে স্পষ্টই প্ৰতীয়মান হইবে, এককালে ইহা হিন্দু দেব-মন্দির ছিল। বৰ্তমান বিশ্বেশ্বরের মন্দির সমাচতুষ্কোণ প্রাঙ্গণের মধ্যে অবস্থিত। মিরঘাট ও জরাসন্ধঘাটের অদূরেই এই মন্দির। কোন মহাত্মা দেবাদিদেব বিশ্বশ্বরের সুন্দর কারুকাৰ্য্যসম্পন্ন এই মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন। চূড়াসমেত ইহা ৫১ ফুট উচ্চ। মহারাজা রণজিৎ সিংহ মন্দিরের খিলান, চুড়া ও কলস ইত্যাদি তামার উপর স্বর্ণদ্বারা মণ্ডিত করিয়া দিয়াছেন। দীপ্ত সূৰ্য্যালোকে কাঞ্চনমণ্ডিত মন্দিরচুড়া পথিকের চক্ষু ঝলসাইয়া দেয়। চূড়ার উপরে ত্ৰিশূল ও তাহার পাশে সর্বদাই পতাকা উডতীয়মান। মন্দিরের খিলানের মধ্যস্থলে ৯টা বৃহৎ ঘণ্টা টাঙ্গান আছে । ইহার মধ্যের সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্ববৃহৎটা নেপালের মহারাজা প্ৰদান করিয়াছেন। যিনি এই মন্দিরে প্রবেশ করিয়াছেন, তিনিই ধন্য হইয়াছেন। ধৰ্ম্মের নিৰ্ম্মল পবিত্রতা এখানে বিরাজমান। কি সুন্দর দৃশ্য, ভক্তির সুমধুর প্রীতির ভাব এখানে দেখিতে পাওয়া যায় । ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিভিন্ন স্থানের কতশত হিন্দুভক্তগণ বাম বম রবে চতুৰ্দিক প্রতিধ্বনিত করিতে করিতে। ভক্তিভাবে বিশ্বেশ্বরের লিঙ্গ দর্শন করিতেছেন। সকলের মুখেই দেব-দৰ্শনজনিত অপূর্ব প্রীতির ভাব ফুটিয়া উঠিয়াছে। কেহ করযোড়ে সজলনয়নে ভক্তিবিকম্পিত কণ্ঠে স্তব্যপাঠে নিরত, কেহ মনের আনন্দে সুমধুর স্বরলহরীতে চারিদিকে সুরের ঝঙ্কার তুলিয়া দিয়া বেদপাঠ করিতেছেন। ভক্ত হিন্দুর এমন অপূর্ব মিলন অতি অল্পস্থানেই দৃষ্ট হয়। সন্ধ্যার সময়। দেবাদিদেবের আরতি-দৃশ্যের বর্ণনা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। সুমধুর বেদধ্বনিতে ও বাস্থ্যরবে অপূর্ব পুলক সমাবেশ, আর শত শত নরনারী ভক্তিগদগদাচিত্তে একদৃষ্টে সেই মহান দেবতার দিকে নিনিমেষ নয়নে । চাহিয়া রহিয়াছেন। ধৰ্ম্মপ্ৰাণ ভারতে ধৰ্ম্মলাভের জন্য সর্বসাধারণের