পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| মথুরা হইতে বৃন্দাবন যাইবার পথ বড়ই মনােহর। আমাদের দক্ষিণ দিক দিয়া কবিতারূপিণী সুর-সুন্দরী যমুনা নদী ধীর-গমনে প্ৰবাহিতা, আর বাম পার্শ্বে শ্যামল প্রান্তর-মধ্যস্থ বনভূমির অপূর্ব শোভা ! এ শ্যামল । শোভাময় স্বভাব-সুন্দর কানানগুলির মধ্যে অকুতোভয়, হিংসা-দ্বেষ বৰ্জিত শিখিকুলের রমণীয় পদক্ষেপ প্রতি মুহূৰ্ত্তে হৃদয়কে এক অপূর্ব আনন্দে অভিষিক্ত করিয়া দিতেছিল । একদিন যে বৃন্দাবনধামে আসিতে কত কষ্ট সহা করিতে হইত, মৃত্যু স্থির নিশ্চয় মনে করিয়া গৃহ হইতে বিদায় লাইতে হইত, সেই নানা বিপদ-সন্ধুলি-দসু্য তস্করের ভয়যুক্ত বৃন্দাবনের পথ এখন সহজ ও সুগম। সুদূর পূর্বপ্রান্তলীন শ্যামল বঙ্গ জননীর স্নেহের কোল হইতে আমরা কতদূরে চলিয়া আসিয়াছি, ; কিন্তু কই আমাদের ত কোন বিষয়েই কোনরূপ ক্লেশ সহ । করিতে হয় নাই ! কালের পরিবর্তনে সকলি অদ্ভূত বলিয়া মনে হয়। আজ আমরা বৃন্দাবনে । এই কি সেই মধু বৃন্দাবন ? একদিন যাহার বনে বনে যশোদার নয়ন-মণি চঞ্চল রাখাল বালক খেলিয়া বেড়াইত ? যাহার বঁাশীর উন্মাদ আহবানে যমুনা উজান বহিত ও গোপ-রমণীগণের হৃদয় মধ্যে প্রেমের উত্তাল তরঙ্গ প্রবাহিত হইয়া ব্যাকুলা করিয়া তুলিত ! তেমনি করিয়া কলনদিনী যমুনা বহিয়া চলিয়াছে, তেমনি আগের মত গোপ-যুবতী স্নান রত, তেমনি কানন, তেমনি সৌন্দৰ্য্য, তেমনি ময়ুর ময়ুরী কেক রবে দিগন্ত মুখরিত করিয়া তুলিতেছে, কিন্তু হায়! যশোদার নয়ন-মণি-রাধিকার হৃদয়-রত্ন—ভক্তের কল্পতরু-পাপীজনের একমাত্ৰ গতি- -কোথায় সেই পীতাম্বর ? কোথায় সেই বঁাশীর তানে আকুল করে প্ৰাণ! গোপী যুবতীরা গাগরী কক্ষে জল আনিতে যায়, কিন্তু কদম্বতলায় আর সেই বসন-চােরা দাড়াইয়া নাই-সব শূন্য-সব খালি ! বৃন্দাবনে উপনীত হইয়া হৃদয়ে যে আনন্দের উদ্রেক হইল—তাহা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। পলক মধ্যে সুদূর অতীতের নানা-কাহিনী পথের কথা । SO