পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃন্দাবন । কাহারও নয়ন পথে পতিত হয় না। জয়দেবের মধুর লেখনী নিঃসৃত সরল সুন্দর বসন্ত শোভা এখন আর বৃন্দাবনে দেখিতে পাওয়া যায় না । পৌরাণিক বর্ণনা বৈভবের সহিত বৰ্ত্তমানে কোনও সোসাদৃশ্য পরিলক্ষিত না হইলেও— এখনও যে হিন্দু নরনারীর নিকট শ্ৰীশ্ৰীবৃন্দাবনধাম পূণ্যময় মহাতীৰ্থরূপে পরিগণিত তাহার কোন ও সন্দেহ নাই। প্রায় সাড়ে চারিশত বৎসর পূর্বে মুসলমানদের অত্যাচারে সত্য সত্যই বৃন্দাবনধাম অরণ্যে পরিণত হইয়াছিল, গজনীর সুলতান মামুদের নিদারুণ অত্যাচারে বৃন্দাবনের সমগ্ৰ তীর্থই প্ৰায় বিলুপ্ত হইয়াছিল, সে অত্যাচারের দিনে বৈষ্ণবগণ প্রাণভয়ে কেহই আর বৃন্দাবনধামে আসিতে চাহিতেন না। যে পুণ্যভূমি একদিন চির বসন্তের মধুময় হর্মে শ্বেত সৈকত মধ্যবৰ্ত্তী যমুনার কল-সঙ্গীতে মধুকর নিকরের সুমধুর গুঞ্জনধ্বনিতে চির মধুময় ছিল, একদিন যাহার প্ৰতি কুঞ্জ কুটিরে নন্দদুলালের মধুর মোহিনী সঙ্গীতে নরলোকে বৈকুণ্ঠধামরূপে পরিচিত ছিল, যাহার সহস্ৰ সহস্ৰ দেবালয় ভক্তবৃন্দের প্ৰেমাশ্রিত্নতে প্ৰক্ষালিত হইত, সত্য সত্যই উহা সুলতান মামুদের পৈশাচিক উৎপীড়নে বন্যাশ্বাপদের আবাসস্থল বিজন কাননে পরিণত হইয়াছিল। মুসলমান দাসরাজগণ যখন ভারত-সিংহাসনে সমাসীন ছিলেন, তখন দুই একজন ব্ৰজবাসী ভিন্ন কেহই এই নিভৃত স্থানে বাস করিতেন না, তখন দ্বাদশ যোজন ব্যাপী এই পুণ্যতীর্থ সত্য সত্যই ভীষণ অরণ্যে পরিণত হইয়াছিল। সে সময়ে পথের দুৰ্গমতা, মুসলমানের অত্যাচার ও দস্তুত্যুভয় ইত্যাদির নিমিত্ত গৃহী তীর্থ যাত্ৰিগণ কেহই এখানে আসিতেন না। দাসরাজগণের অধঃপতনের পরে ক্রমশঃ মোগল বংশের সাম্রাজ্য শাসনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণের অত্যাচার ও অবিচার হ্রাস হইতে আরম্ভ করিলে পুনরায় ধাৰ্ম্মিক হিন্দুগণের চেষ্টা যত্নে বৃন্দাবনের উদ্ধার হয়। বৈষ্ণব কবি মুরারী গুপ্তের শ্ৰীচৈতন্যচরিত কাব্যে ও শ্ৰীকৃষ্ণদাস কবিরাজের শ্ৰীচৈতন্য চরিতামৃত পাঠে জ্ঞাত হইতে পারা যায় যে কিরূপে পুনরায় ব্ৰজমণ্ডলের লীলাস্থান সমূহের উদ্ধার সাধিত হইয়াছিল। কথিত আছে যে প্ৰেমাবতার শ্ৰীশ্ৰীচৈতন্যদেব প্ৰথমে এই পুণ্যময় তীর্থে আগমন করিয়া ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের কোনও লীলাস্থান বাহির করিতে না পারিয়া ❖b”ዓ