পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSS-St. ঘাট’ দেখিতে গেলাম। নদীতীর-নদীগর্ভ হইতে অতি উচ্চ-প্ৰায় কাশীর মত। এখান হইতে প্ৰায় ৫০ ফুট নামিয়া গেলে, গঙ্গাজল স্পর্শ করিতে পারা যায়। ঘাটের আর সে শোভা নাই। ধনী বণিক বিহারীলাল লক্ষ-লক্ষ মুদ্রাব্যয়ে যে প্রশস্ত সোপােনাবলী নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন, তাহার একখানি পাথরও আর এখন স্বস্থানে নাই । ঘাটের উপর যে সুদৃশ্য হিন্দু মন্দির শ্রেণী ছিল, তাহাও এখন ভগ্নস্তুপে পরিণত হইয়াছে। এই ধ্বংস দেবদ্বেষী মুসলমানের হাতে হয় নাই। সিপাহীবিদ্রোহের সময় এই ঘাটে নৌ-সেতু ছিল। গোয়ালিয়রের বিদ্রোহী । সেনাদল এই সকল দেবমন্দির আশ্রয় করিয়া নৌ-সেতু আক্রমণ করে। ইংরাজ-সেনাপতি সার কলিন দ্বিতীয়বার লক্ষ্মৌ যাইবার পূর্বে এই মন্দিরগুলি গোলার আঘাতে রাবিশে পরিণত করিয়া চলিয়া যান। নিরীহ দেবী-পূজক মন্দিরের অধিকারী ব্ৰাহ্মণের ভঁাহাকে বিস্তর অনুনয়-বিনয় করিয়া মন্দিরগুলি রক্ষা করিতে অনুরোধ করে, কিন্তু তিনি নৌ-সেতু সুরক্ষার জন্য সামরিক প্রয়োজনে বহুদিনের বিস্মৃত কালাপাহাড়ের লীলার পুনরাভিনয়ের আদেশ দিয়াছিলেন। বহুদিন ঘাটটি অব্যবহাৰ্য্য ছিল, এখন কিছু কিছু সংস্কারের চেষ্টা হইতেছে শুনিয়া আসিলাম । পূর্বেই বলিয়াছি যে, কানপুর প্রাচীন সহর নহে—কাজেই প্রাচীন দর্শনীয় অট্টালিকা বা প্ৰাসাদ-মন্দিরাদি এখানে এক প্ৰকার নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ১৭৬৪ খ্রীস্টাব্দে বক্সারের ও ১৭৬৫ খ্ৰীষ্টাব্দে অযোধ্যায় নবাব উজীর সুজাউদ্দৌলা কোরায় যুদ্ধে পরাজিত হইলে এই নগর নিৰ্ম্মিত হয় । ১৮০১ খ্ৰীষ্টাব্দে ইংরাজেরা অযোধ্যার নবাবের নিকট ইহার চতুষ্পাশ্বস্থ স্থান প্ৰাপ্ত হইলে, ইহা একটী প্ৰধান জেলা বলিয়া পরিগণিত হয়। ১৮৫৭ সনের সিপাহী-বিদ্রোহের ঘটনা ব্যতীত এস্থানে আর কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে নাই । বিস্তরে এখনও নানাসাহেবের বাড়ীর ভগ্নাবস্থা দেখিতে পাওয়া যায়। বৰ্ত্তমান সময়ে কানপুর একটী প্ৰসিদ্ধ বাণিজ্য-প্ৰধান স্থানে পরিণত হইয়াছে। এখানকার চাৰ্ম্মের কারবার বিশেষ প্ৰসিদ্ধ। ‘কানপুরী জুতা' এই “স্বদেশীর’ দিনে কলিকাতায় বসিয়াও আমরা আদরে গ্রহণ করি । SSRS