পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার ভগবৎ কল্পনায় এখানে দুই বিপুল নদীর সঙ্গম ঘটিয়া আরও বিচিত্র করিয়া তুলিয়াছে। নগরটি যুগযুগান্তরকাল হইতে যাত্রীসমাগমের জন্য বিখ্যাত, হতরাং বিদেশী আসিলে আর এখানে কোন কষ্ট পায় না। থাকিবার ও আহারাদি করিবার কোন অভাব এখানে নাই। তবে তীৰ্থ কলঙ্ক পাণ্ডাদিগের অত্যাচার এখানে যে নাই তাহা নহে; কিন্তু তাহা কাশীর ‘কেশেল” ৰা, মথুরার ‘চৌৰে’ ও বৃন্দাবনের ‘ব্ৰজবাসীর’ ন্যায় নহে। সে সকল স্থানে পাণ্ডাদিগের মধ্যে অত্যাচারীর সংখ্যা যত অধিক, প্ৰয়াগে সে তুলনায় দুই আনা আছে কি না সন্দেহ, তবে যাহারা দুস্টস্বভাবের, তাহাদের সঙ্গে প্ৰাপ্যগণ্ড মিটাইতে সময়ে সময়ে যাত্ৰিগণকে পুলিসের মধ্যস্থতা ও সহায়তা লাইতে হয়, এতটা আবার আর কোথাও নাই। প্ৰতি দ্বাদশবর্ষে এখানে কুম্ভমেলা হয়। সূৰ্য্য যখন কুস্তরাশিতে সংক্রমণ করেন অর্থাৎ মাঘ ফাঙ্কনের মধ্যে তিথিবিশেষে সূৰ্য্য যখন কুস্তরাশিতে প্ৰবেশ করেন সেই সময় ফুস্তুরাশি যে দেশে অবস্থিতি করে, সেই দেশেই এ মেলা হয়। একখান্নাইইতে দ্বাদশবর্ষান্তরে কুস্তরাশি পুনরায় সেই স্থানে ফিরিয়া আসে। সকল স্থলে মেলা হয় না। প্ৰয়াগ, হরিদ্বার, দ্বারকা প্রভৃতি কয়েক স্থানেই মেলার প্রবলতা খুব বেশী। প্ৰয়াগের কুম্ভমেলায় সর্বাপেক্ষা ভিড় হয়। সঙ্গম সুদানের জন্য হিমালয়ের গুহাপ্রস্থিত সন্ন্যাসীরাও নামিয়া আসিয়া থাকেন । সন্ন্যাসীর দল ও স্নানযাত্রা দেখিতে অতীব বিস্ময়কর। বহু ধনী মঠের মোহান্তের অধীনে এবং বহু রাজা মহারাজার প্রদত্ত সাহায্যে হয়হস্তী আরোহণে তেজঃপুঞ্জ কলেবর, উলঙ্গ, জটাজুটধারী ৰিশ ত্ৰিশ হাজার পৰ্য্যন্ত সন্ন্যাসীর দল আসিয়া থাকে। অনেকের তপঃক্লিষ্ট, তেজোপূর্ণ দেহ দর্শনে হৃদয়ে ভক্তি বিস্ময়ে আপ্নত হইয়া উঠে ! কুস্তের সময়ে প্ৰয়াগে ৫৬ লক্ষ লোকের আগমন হয় ! -একেইতো স্মরণাতীতকাল হইতে বিশ্রাত উত্তীর্থরাজ প্ৰয়াগের প্রতি হিন্দুর হৃদয় লইয়া সহজেই আকৃষ্ট হইয়াছিলাম, তাহার উপর এই সকল বিষয়ের কথোপকথনে ইহার অভ্যন্তরে ভ্ৰমণ করিবার আগ্রহ এত বাড়িয়া গেল ষে বাঙালীর অতিপ্ৰিয় তৈল-তাম্রকুটসেবা” অতি সংক্ষেপে সারিয়া লইয়া স্নান ও আহারে অতিমাত্র ত্বর করা ।