পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভ্ৰমণ । এই মন্দিরে ছাগ বলির যেরূপ বাহুল্য এবং অশাস্ত্রীয় ব্যবস্থা দেখিলাম এরূপ আর কোথাও কোন দেবীমন্দিরে দেখিনাই । সূর্য্যোদয় হইতে মধ্যাহ্ন আরক্রিকের পূর্ব পৰ্যন্ত অনবরত ছাগ বলি চলিতে থাকে। বলির পশুর শৃঙ্গোদ্ভেদ না হইলে তাহা বলির যোগ্য হয় না, ইহাই শাস্ত্ৰবিধি কিন্তু ছাগ শিশু বলির বড়ই প্ৰাদুৰ্ভাব ! এত শিশু ছাগ বলি দেওয়া হয় যে, দেখিলে বা শুনিলেও শিহরিয়া উঠিতে হয়!! — দুইদিনের শিশুও বলি দেওয়া হয় । এই সকল শিশু ছাগ বলির জন্য যুপ নাই, মৃত্তিকা স্তুপের উপর শয়ন করাইয়া কদলী কৰ্ত্তনের ন্যায় কুছ করিয়া কাটিয়া ফেলে এবং দেহটি যখন হাতের তলে করিয়া লইয়া যায়, তখন হাতের দুই পার্শ্বে সেই কোমল দেহাংশ বুলিয়া পড়ে,-- সে দৃশ্য দেখিলে আপাদ মস্তক কম্পিত হইয়া উঠে ! পাণ্ডাদিগকে শাস্ত্ৰ বিধানের কথা বলিয়া এই শিশু বলির রহস্য জিজ্ঞাসা করিলাম।—পাণ্ডারা বলিলেন, দেবী শিশু মাংসেরই লোলুপা,—তাহারই প্ৰত্যাদেশে স্মরণাতীত কাল হইতে এ মন্দিরে এই প্ৰথা চলিয়া আসিতেছে । আমরা যোগমায়া দর্শন করিয়া একায় আরোহণ করিলাম। এক্কা দ্রুতবেগে পৰ্বতাভিমুখে চলিতে লাগিল । পথে যাইতে যাইতে পাহাড়ের অতি উচ্চ স্থানে একটা সুন্দর অট্টালিকা দেখিলাম। জিজ্ঞাসায় জানিলাম উহা জনৈক হিন্দুস্থানীর ব্যয়ে নিৰ্ম্মিত স্বাস্থ্য নিবাস । তঁহারই ব্যয়ে উহা পরিচালিত হয়, দৈনিক ২২ টাকা ভাড়া দিলে থাকিতে পারা যায়। ইংরাজী ধরণের—খাদ্যাদি পাকের জন্য বাবুচ্চির বন্দোবস্ত আছে। পথে বিলম্ব করিব না বলিয়া আমরা আর উহা দর্শনের জন্য নামিলাম না । এক্কা ক্ৰমশঃ এক নিৰ্জন ধৰ্ম্মশালার দ্বারে আসিয়া দাড়াইল । এই ধৰ্ম্মশালাটির বন্দোবস্তের প্রশংসা শুনিলাম। কিন্তু তখন আমাদের উহার ভিতরে যাইবার আবশ্যক না থাকায়, আরও কিয়দুর ঘুরিয়া আসিয়া পাহাড়ে উঠিতে লাগিলাম। পাহাড়ের উপরে দেবী মন্দিরে রক্তবর্ণ নিশান ৰহুদূর হইতে দেখা যায়। এখান হইতে দামামা ধ্বনিও শোনা গেল । কিয়দার পার্বত্য পথে উঠিয়া পাহাড়ের গাত্রে সুন্দর গাঁথা পাথরের সিঁড়ি পাইলাম । ইহা দিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া উঠিয়া আমরা দেবী মন্দিরের নিকটে পহুছিলাম। মন্দিরের অৰ্দ্ধ পথে সিড়ির একটি চত্বরের উপরে দাঁড়াইয়া 998