পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৫২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিন্ধ্যাচল । সম্মুখে দৃষ্টিপাত করিলে দেখা যায়,-নিক্সে—বহুনিক্সে বহুদূরে রজত রেখার ন্যায় গঙ্গার বিমল ধারা বহিয়া যাইতেছে, তীরে বেলাভূমি, তৎপরে প্রান্তর, তৎপরে প্রথমে বিরল, পরে ঘন বিন্যস্ত বনজাত তরুশ্রেণী । গঙ্গাতীর হইতে বনের সীমা পৰ্য্যন্ত সমতল, পরে অল্পে অল্পে উচ্চ হইয়াছে। যে চত্বরে আমরা দাড়াইয়াছি। এখান হইতে ধৰ্ম্মশালার দ্বার বহু নিম্নে এবং পর্বত প্ৰায় সোজা হইয়া উঠিয়াছে ; সেই জন্যই এই শিখরে উঠিবার জন্য সিঁড়ি করিতে হইয়াছে। পাহাড়ের নিক্সে বিরল বনের মধ্যে গরু বাছুর ছাগল দুই চারিটি দেখিলাম। নিকটে গ্রাম নাই, ধৰ্ম্মশালা ব্যতীত অন্য লোকালয় নাই । আরও কতকগুলি সিঁড়ি বাহিয়া উপরে উঠিয়া দেখিলাম সিঁড়ি দুই ভাগ হইয়া গিয়াছে। আমরা বামের সিঁড়ি দিয়া মন্দির-পথে যাত্ৰা করিলাম, দক্ষিণের পথে পর্বতের উপর দিয়া, ব্ৰহ্মকুণ্ড, ভৈরবকুণ্ড, সীতাকুণ্ড প্ৰভৃতি প্রস্রবণযুক্ত তীৰ্থকুণ্ডে যাইতে হয়। দেব মন্দিরের চত্বরটি বড় বেশী প্ৰশস্ত নহে, প্ৰস্তারাদি ফেলিয়া বন্ধুর পৰ্বতপৃষ্ঠ সমতল করিয়া লওয়া হইয়াছে। এই চত্বরের চতুর্দিকে কোন সময়ে প্রাচীর বেষ্টিত ছিল এরূপ অনুমান করিবার অনুকূলে অনেক নিদর্শন বর্তমান আছে দেখিলাম। স্থানটি নিৰ্জন, কিন্তু অপ্ৰশস্ত ও গভীর অরণ্যগৰ্ভস্থ বলিয়া বিশেষ চিন্তাকর্মক নহে। চত্বরের একদিকে সিংহদ্বার ছিল। তাঁহারই সম্মুখে দেবীমন্দিরে আসিবার সিঁড়ির এক মুখ আসিয়া মিলিয়াছে। এই দ্বারের সম্মুখে যুপকাষ্ঠ দেখিলাম। আর একখানি বৃহৎ প্ৰস্তর এক পার্শ্বে পড়িয়া আছে দেখিলাম। শুনিলাম পূর্বে ঠগীদিগের প্ৰাদুৰ্ভাব সময়ে, তাহারা এই পাথরে নরবলি দিত। এক সময়ে এই মন্দিরে নররক্ত লোলুপ কাপালিক সন্ন্যাসীরও প্রাদুর্ভাব ছিল। নরবলির পাথরখানি দেখিয়া শরীর শিহরিয়া উঠিল । কাপালিকের ন্যায় বঙ্কিমচন্দ্রের কপাল কুণ্ডলা মনে পড়িল! এই নিৰ্জন বনে কপালিনীর মন্দির চত্বরে দাঁড়াইয়া সেই নীলোৰ্ম্মি-চঞ্চল বারিধি তটস্থ কাপালিকের ভৈরব রব “কপাল কুণ্ডলে!” এই বিরাটধ্বনি যেন শুনিতেছিলাম। মন্দির চত্বরে মালাক্ষর পত্নীরা পূজাখীর জন্য ফুলমালা নৈবেদ্য বেচিতে বসিয়াছে। সংখ্যায়। তাহারা বেশী নহে ৪৷৫ জন মাত্র। দরিদ্র ভারতের এই বনান্তরালে Woqood