পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরী বা জগন্নাথ রূপেই উৎকল অধিকার করিতে পারেন নাই। ১৫৬৮ খ্ৰীষ্টাব্দে বাঙ্গালার নবাব সুলামানের সেনাপতি কালাপাহাড় (ইনি পূর্বে ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। কিন্তু কোনও মুসলমান রমণীর প্রেমে পতিত হইয়া মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হ’ন ) যাজপুরের নিকট গঙ্গাবংশীয় নরপতি মুকুন্দদেবকে পরাজিত করিয়া তাঁহাকে নিধন করেন ও পুরীর অনেক দেব দেবীর হস্তপদাদি ছেদন করিয়া দেন। সুলামানের মৃত্যুর পর তঁহার পুত্র দাউদ মোগল সম্রাটের অধীনতা পাশ ছিন্ন করিয়া স্বাধীন হন এবং জলেশ্বর নামক স্থানে পাঠান সৈন্যের সহিত মোগল সৈন্যের ঘোরতর যুদ্ধ হয়, সেই যুদ্ধে পাঠানগণ পরাজিত ও বিতাড়িত হ’ন । এই যুদ্ধের পর হইতে ১৭৪১ খ্ৰীষ্টােব্দ পৰ্য্যন্ত ওড়িষ্যা মোগল সম্রাটের রােজ্যাধিকারভুক্ত ছিল। মোগলের পরে ১৭৪২—১৮০৩ খ্ৰীষ্টােব্দ পৰ্য্যন্ত । ইহা মহারাষ্ট্ৰীয়দিগের অধীনে থাকে। ১৮০৩ খ্রীস্টােব্দ হইতে ওড়িষ্যা প্রদেশ ইংরেজ রাজ্যের অন্তভূক্ত হয় এবং তদবধি তাঁহাই আছে। আমরা যখন পুরীতে আসিয়া পহুছিলাম, তখন বেলা প্ৰায় এগারটা হইবে। প্রখর সূৰ্য্য কিরণে অদূৱস্থিত সমুদ্রের সিকতাময় বেলাভূমি ঝাক ঝক করিয়া জুলিতেছিল, সমুদ্রের তরঙ্গোচ্ছাসের শব্দ কাণে আসিয়া প্ৰবেশ করিতেছিল। ষ্টেসন লোকে লোকারণ্য—যাত্ৰিগণের সেই গগনভেদী “জয় জগন্নাথকীজয়” রবে ষ্টেসন প্ৰতিধ্বনিত হইতে ছিল, কত দেশ বিদেশের যাত্রী – নেপালী, ভূপালী, গুজরাটী, মারোয়ারী কে তাহাদের সংখ্যা করে ? কত রং বেরংয়ের পোষাক, কত রকমের পুরুষ রমণী, কত রকমের মাথার পাগড়ী—হিন্দুস্থানী ভায়াদের পৃষ্ঠের উপর পর্বত প্ৰমাণ বোঝা, হাতে লম্বা লাঠি ও লোটা-চারিদিকেই কল-কোলাহল, আর ওদিকে পাণ্ডা ভায়াদের যাত্রী-শিকার ধরিবার নানা কৌশল, বিকট চীৎকার, ক্ৰমে লটা একটু থামিয়া গেল, তখন ধীরে ধীরে সঙ্গীয় পাণ্ডার সহিত আমাদের নিৰ্দ্ধিারিত বাসার দিকে রওয়ানা হইলাম। বালুকপূর্ণ রাস্তা দিয়া অগ্রসর হইতে লাগিলাম, রাস্তার দুইধারে সারি সারি নারিকেল গাছ ও ঝাউ গাছের শ্রেণী। ছোট ছোট দালান, কুঁড়ে ঘরগুলি বালুকাময় রাস্তার দুই পার্শ্বে একটু নূতনত্ব প্ৰকাশ করিতেছিল। দালানগুলিও গাছগুলির মাথার উপর দিয়া ধবজ পরিশোভিত জগন্ননাথদেবের উচ্চ মন্দিরের শীর্ষ দেখা যাইতে 8 o SD