পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভ্ৰমণ । রামনগর বা ব্যাসকাশীতে উপস্থিত হইলাম। একদিকে কাশীর তটপ্ৰদেশ জাহ্নবীর গর্ভ হইতে যেমন পৰ্বত প্ৰমাণ উচ্চ, আবার অপর দিকে রামনগরের দিকের তটপ্রদেশ একেবারেই নিম্ন। কাশীতে মৃত্যু হইলে মানুষ যেমন শিবত্ব লাভ করে-ব্যাসকাশীতে মৃত্যু হইলে আবার গর্দভযোনি প্ৰাপ্ত হয়, ইহাই সাধারণের বিশ্বাস। কবি ভারতচন্দ্ৰ “অন্নদামঙ্গলে।” ব্যাসের কাশীনিৰ্ম্মাণমহিমা এবং দেবী কর্তৃক তঁহার ছিল অতি সুন্দরীরূপে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। ব্যাসকাশীতে দেখিবার কিছুই নাই-একটী সামান্য ছোট মন্দির কেবল ব্যাসদেবের কাশীনিৰ্ম্মাণের গৌরব বা বিদ্রুপ ঘোষণা করিতেছে ! এই মন্দিরটাও বিশেষ প্রাচীন বলিয়া বোধ হইল না। সম্মুখেই একটা পুষ্করিণী, পুষ্করিণীর জল অত্যন্ত অপরিস্কার, মন্দিরমধ্যে একটা শিবলিঙ্গ স্থাপিত। রামনগরে কাশীর মহারাজার প্রাসাদ, মহারাজার উদ্যানবাটী, দীঘিকা, মৰ্ম্মর প্রস্তর বিনিৰ্ম্মিত হাওয়া খাইবার ঘর ইত্যাদি সকলই সুন্দর। রামলীলার সময়ে এস্থানে খুব আমোদ হইয়া থাকে। ভাগীরথীর কলকল্লোলামুখরিত সুরম্য তটপ্রদেশে রামনগরের কেল্লা, সেই কেল্লার মধ্যেই মহারাজার প্রাসাদ অবস্থিত। এই কেল্লা বহুকালের প্রাচীন, নদীর মধ্য হইতে ইহার দৃশ্য পরম রমণীয় বোধ হয়। মহারাজার সুসজ্জিত দরবার গৃহ এবং চিত্রশালা দেখিতে বড়ই সুন্দর। চিত্রশালায় বহু রাজবংশীয় নৃপতিগণের চিত্ৰ আছে। নদীর দিকের বারান্দায় উপবেশন করিলে ক্লান্ত শরীর সজীব হয়—অদূরে গঙ্গা বহিয়া যাইতেছে, পরপারে কাশীর সুন্দর দৃশ্য—আর ভাগীরথীর শীতল-সলিল-সম্পাক্ত সুমন্দ পােবন উত্তপ্ত দেহকে সুশীতল ও স্নিগ্ধ করিয়া দেয় । আমরা দ্বিপ্রহরের সময় কাশীতে ফিরিয়া আসিলাম । কাশীর কথা পাঠককে নূতন করিয়া বলিব এমন শক্তি কোথায় ? যে তীর্থ সকলের সুপরিচিত-যেখানে প্রতিদিনই শত শত হিন্দু আসিতেছেন ও বিশ্বেশ্বরের নিৰ্ম্মাল্য গ্রহণ করিয়া ধন্য হইতেছেন,--হিন্দুর সেই পবিত্রতম তীর্থের অনন্তকাহিনী লিখিয়া প্ৰকাশ করা অসম্ভব-—তবু যাহা লিখিয়াছি তাহা আমার ক্ষুদ্র হৃদয়ের প্রতিধ্বনি। কাশীর অনতিদূরে সারনাথ প্রত্নতত্ত্ববিদগণের