পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৬৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খগুগিরি ও উদয়গিরি । শোভা দেখিয়া মোহিত হইতে হয়। কি সুন্দর ! দূরে সুনীল গগনপটে চিত্রের ন্যায়। ভুবনেশ্বরের মন্দির ; নিম্নে পৰ্বতের উভয় পার্শ্বস্থ উচ্চ শির তরুরাজীর দিগন্ত-বিস্তৃত-নৰ্ত্তন-লীলা – কোথায় কতদূরে কোন নীল শৈলমালার পাদমূলে যে ইহারা নিঃশেষ হইয়াছে, তাহা অনুমান করা অসম্ভব । সহস্ৰ সহস্ৰ নানাজাতীয় তরুশ্রেণী নয়নানন্দদায়ক হরিৎ ক্ষেত্ৰ মৃদুমন্দ সমীরণে আন্দোলিত হইয়া, পৃথিবী-সুন্দরীর নব-যৌবন-সুষমা প্ৰকটিত করিয়া থাকে। চারিদিকে গভীর নিস্তব্ধতা,-চারিদিকে সৌম্য স্নিগ্ধা শান্তিরাণী বিরাজিতা । গাছের শাখায় বসিয়া কত অজানা দেশের অজানিত বিহঙ্গম সকল স্বর-লহরীতে চিত্তমুগ্ধ করিয়া থাকে। এরূপ শান্তিপূর্ণ স্থান অতি অল্পই দেখা যায়। প্রখর সূৰ্য্যকিরণোদ্ভাসিত জননী বসুমতী শিশুর ন্যায় যেন এই গিবিদ্বয়কে শ্যামল সুন্দর অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত করিয়া, মৃদুল বীজনে ঘুম পাড়াইতেছেন। প্ৰকৃতিদেবী যে কত মনোমোহিনী—আমাদের মাতা বসুমতী যে কত স্নেহময়ী, ক'ত ঐশ্বৰ্য্যময়ীতাহা যিনি কখনও পর্বতারোহণ করিয়া নৈসর্গের প্রাণারাম শোভাসম্পদ দর্শন ও চিত্তে অনুভব করিয়াছেন, তিনিই তাহ অবগত আছেন । পাহাড়ের শীর্ষস্থ এই মন্দির দুইটার জীর্ণসংস্কার হইয়াছে। উহাদের মধ্যে বৌদ্ধদেবের বিবিধ প্রকারের মূৰ্ত্তিও বিরাজিত আছে। মন্দিরদ্বয়ের নিকটে সমতল ভূমিতে কতকগুলি বৌদ্ধস্তুপ রহিয়াছে, ইহাদের নাম দেবসভা। এগুলি যে কি উদ্দেশে নিৰ্ম্মিত হইয়াছে, সে বিষয়ে কেহই কোনও স্থিরসিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারেন নাই । কাহারও কাহারও মতে এইগুলি মহাযান বৌদ্ধগণ কর্তৃক পুণ্যার্থ স্থাপিত হইয়াছিল, কাহারও কাহারও মতে এই স্তম্ভগুলি কোনও কোনও বৌদ্ধভিক্ষুগণের সমাধি-চিহ্ন ; আবার কেহ কেহ বলেন যে, সন্ধ্যার সময়ে সমুদয় ভিক্ষুগণ সমবেত হইয়া এস্থানে ধৰ্ম্মালোচনা করিতেন বলিয়া ইহার নাম দেবসভা হইয়াছে । এই শেষোক্ত সিদ্ধান্ত অসম্ভব বলিয়া বিবেচিত হয় না। সুন্দর সমতল ভূমি,-চারিদিকে প্ৰকৃতির সৌম্য নীরবতা, উদ্ধে মণিরঞ্জিত অনন্ত নীলগগনরূপ চন্দ্ৰাতপ আনন্তের মহিমা জ্ঞাপন করিতেছে, ইহা কি ধৰ্ম্মালোচনার উপযুক্ত স্থান নহে ? যে খণ্ডগিরি ও উদয়গিরি একসময়ে বৌদ্ধ যতিগণের পুণ্যময় চরণাধুলিতে سیاہ