পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জৌনপুত্র । । সন্ধ্যার অব্যবহিত পরে রাত্রি ৮৭৯ ঘটিকার সময় বারাণসীধাম পরিত্যাগ করিয়া আউড এণ্ড রোহিলখণ্ড রেলওয়েতে ( Oudh, and Rohilkhand Railway) Certists first first setta হইলাম। রজনীর স্তব্ধ নীরবতা ভঙ্গ করিয়া গাড়ী চলিতে লাগিল, কিয়ৎকাল পরে গাছের আড়াল দিয়া কৃষ্ণপক্ষীয় তৃতীয়ার চন্দ্ৰ হাসিতে হাসিতে সুনীল গগনতলে ভাসমান হইলেন। সে শুভ্ৰজ্যোৎস্নালোকে প্রকৃতির যে শোভা দেখিলাম, তাহা যে বাংলা দেশ হইতে স্বতন্ত্র, তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই; সবই শ্যামলা বঙ্গজননীর সৌন্দৰ্য্য হইতে পৃথক রকমের। রেলপথের দুইপার্থে যতদূর দৃষ্টি চলে, সারি সারি শাল গাছ,- শাল গাছের পরে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ আপনার বিরাট শরীর শুভ্ৰ জ্যোৎস্নাবরণে ঢাকিয়া সুপ্তিমশ্ন, গ্রামের কোনও চিহ্ন দেখা যাইতেছে না। রাত্রি প্রায় এগারটার সময় জৌনপুর পহুছিলাম। যেমন ষ্টেসনে অবতরণ করিয়াছি—আমনি কাম কাম করিয়া প্ৰবল বারিধারা পতিত হইতে লাগিল— আকাশের দিকে চাহিয়া দেখি আকাশ ঘন-কৃষ্ণ-মসীমাখা-মেঘে ঢাকা, কাজেই ভিজিতে ভিজিতে বহুকষ্টে বাসা ঠিক করিয়া রজনী কাটাইতে হইয়াছিল। আমাদের সে ক্লেশের কথা আর অধিক বিবৃত করিয়া, পাঠকগণকে ক্লেশ দিতে চাহি না। তবে একটা কথা মুরুবিয়ান-ভাবে না বলিয়াও থাকিতে পারি না, যিনি ভ্রমণের স্বৰ্গসুখ অনুভব করিতে চাহেন, তাহাকে বহু কষ্টও ভোগ করিতে হইবে। এই উপদেশ বাক্যটা স্মরণ রাখিয়া দেশ ভ্ৰমণ করিতে বাহির না হইলে, দর্শনস্পৃহা চরিতাৰ্থ করা সুকঠিন। প্ৰত্যুষে নগর দেখিতে বাহির হইলাম। পশ্চিমের অন্যান্য নগরের সহিত ইহার যে বড় বেশী পার্থক্য, তাহা নহে-জৌনপুরের খ্যাতি এস্থানের শর্কিরােজ্যাদিগের নিৰ্ম্মিত বহুসংখ্যক মসজিদ ইত্যাদির নিমিত্ত। জৌনপুর অতি প্ৰাচীন নগর, ইহা উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের অন্তর্গত জৌনপুর জেলার প্রধান সহর। ১৩৯৪ খ্ৰীষ্টােব্দ হইতে ১৪৯৩ খ্ৰীষ্টােব্দ পৰ্য্যন্ত এই একশত বৎসরকাল ইহা বুদ্ৰাউন ও এতাবা প্রাচীন ইতিহাস।