পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৯৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থ রচনা করিয়া অহল্যাকে শুনাইয়াছিলেন ; আত্মপ্ৰশংসা শুনিতে সঙ্কুচিত রাজ্ঞী অহল্যা ব্ৰাহ্মণের অনুরোধে সমুদয় গ্ৰন্থ শ্রবণ করিয়া বলিলেন যে, “আমি অতি পাপীয়সী রমণী, এত প্ৰশংসার যোগ্য নহি,” ইহা বলিয়া তন্মুহুৰ্ত্তেই গ্ৰন্থখানা নিৰ্ম্মদ সলিলে নিক্ষেপ করিলেন। এ জগতে সকলেই আত্মপ্ৰশংসা শুনিতে ভাল বাসে, কিন্তু কয়জন এরূপ আত্মপ্ৰশংসা শুনিতে বিমুখ দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি দেখা যায় ? অহল্যাবাইকে সংসারের ঘাত-প্ৰতিঘাতে যেরূপ মৰ্ম্ম পীড়িত হইতে হইয়াছিল,—এতটা বোধ হয় অতি অল্প লোকেরই হইয়া থাকে । পুত্ৰ মালেরাওয়ের মৃত্যুর পর অহল্যা তাহার কন্যা মুক্ত বাইর একটী পুত্রকে নিকটে রাখিয়া পুত্ৰবৎ পালন করিতেন, কারণ মুক্ত বিবাহের পর হইতেই স্বামী গৃহে বাস করিত। সংসারে দেখিতে পাওয়া যায় যে যিনি যত সৎ লোক, তাহার অদৃষ্টেই তত ক্লেশ ও শোক ভোগ । পুণ্যবতী রাজ্ঞী অহল্যার জীবনালোচনা করিলে এই সত্যটী আরও দৃঢ় হয়। মুক্তার যে শিশু সন্তানটিকে তিনি নিজের উত্তপ্ত হৃদয়ের অসহ জ্বালা যন্ত্রণা ভুলিয়া গিয়া স্নেহে লালন পালন করিতেছিলেন, বিধাতার বিচিত্র বিধানে সেই শিশুটি যৌবনাবস্থা প্ৰাপ্ত হইয়াই মৃত্যুমুখে পতিত হইল, একদিকে এইরূপ দারুণ শোক, অন্যদিকে আবার দেখিতে দেখিতে এক বৎসরের মধ্যেই মুক্তার পতি বিয়োগ হইল। মাতার অনুরোধ উপরোধ ও চক্ষের জলে না ভুলিয়া সাধবী সতী মুক্তাবাই স্বামীর সহিত চিন্তারোহণে আত্ম-বিসৰ্জন করিল। যখন পবিত্ৰ তোয় নৰ্ম্মাদার তীর আলোকিত করিয়া চিতা জুলিতেছিল, সে সময়ে ধৈৰ্য্য সহকারে অদূরে দাড়াইয়া অহল্যা তদীয় প্রিয়তমা কন্যার প্রাণ বিসৰ্জন দেখিতে ছিলেন। অগ্নি শিখা মুক্তার শরীর স্পর্শ করায় মুক্ত যখন আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিয়াছিল তখন মাতৃ হৃদয়ের প্রবল স্নেহোচ্ছাসে তিনি উন্মত্তার ন্যায় কন্যার চিতায় ঝাঁপ দিতে উদ্যতা হইয়াছিলেন, সে সময়ে কৰ্ম্মচারিগণ র্তাহাকে বলপূর্বক নিরস্ত করিয়াছিল। কন্যার শোকে অহল্যা এতদূর ব্যথিত হইয়াছিলেন যে তিনি তিন দিন পৰ্যন্ত আহাৰ্য গ্রহণে নিরস্ত হইয়াছিলেন । এইরূপে প্ৰায় ত্ৰিশ বৎসর কাল পৰ্য্যন্ত রাজ্য শাসন করিয়া এই পূতিশীলা রমণী সংসারের পঙ্কিলতা হইতে পুণ্যলোকে প্ৰয়াণ করিলেন। هو