পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৯৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমীরণ সেবনে আমরা বিশেষ ক্লান্তি বােধ করিতেছিলাম না। কিয়দুর | অগ্রসর হইলেই গিরিশ্ৰেণীর সন্নিকটস্থ প্ৰান্তর মধ্যবৰ্ত্তী একটী প্ৰস্তর, নিৰ্ম্মিত বৃহৎ মন্দির নয়ন-পথে পতিত হইল। আমরা ক্ৰমে মন্দির প্রাঙ্গণে । আসিয়া উপনীত হইলাম। এরূপ বিজনস্থানে আগমন করিলে মনের ভিতর অতি বড় সাহসী পুরুষেরও ভয়ের সঞ্চার না হইয়া যায় না। স্থানটি বড়ই বিজন । অদূরে শৈলশ্রেণী মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া আছে, নিম্নে তাহারি পাদদেশে শ্মশান-বিহারিণী নৃমুণ্ডমালিনী শবাসনা ভয়ঙ্করা কালীর মন্দির। মন্দির মধ্যে কালীমূৰ্ত্তি অঙ্কিত আছেন। এই নিৰ্জন ভয়াবহ স্থানে কোনও পুরোহিত বাস করেন না, প্রত্যহ যথারীতি আসিয়া পূজা দিয়া থাকেন মাত্র। পথের ধারে স্থানে স্থানে নরকঙ্কাল ইত্যাদি দৃষ্ট হইল। অদূরে শিপ্রাতীরে শ্মশান ভূমি, কি গভীর, কি নিৰ্জন ! এখানে নগরের কল-কোলাহল প্ৰবেশ করিতে পারে না। নদীর কুলু কুলু ধ্বনি এবং বিহগগণের সুমধুর সঙ্গীত-লহরী ও পবনের মৰ্ম্মর রব ভিন্ন আর কিছুই শ্রাত হয় না । আমরা এই কালীমূৰ্ত্তি দর্শনান্তে মঙ্গলেশ্বর, সহস্ৰধনুকেশ্বর, পিশাচমোচন, দণ্ডাত্ৰেয়, চামুণ্ড, সরস্বতী দেবীর মন্দির প্রভৃতি বহু দেবমন্দির দর্শন করিলাম। এই সমুদয়ের মধ্যে সরস্বতী দেবীর মন্দিরই অতীব প্রাচীন, এই মন্দিরে অনেকগুলি মাতৃকামূৰ্ত্তি আছে, কথিত আছে যে মহারাজ বিক্রমাদিত্য এই মন্দিরে আগমন করিয়া দেবী পূজাদি নির্বাহ করিতেন। . উজ্জয়িনীর চতুর্দিকেই ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন দৃষ্ট হয়। কত রাজা মহারাজার এবং কত বিভিন্ন বিভিন্ন ধৰ্ম্ম-সম্প্রদায়ের যে এস্থানে উত্থান পতন । হইয়াছে তাহ নিৰ্ণয় করা দুঃসাধ্য। যে দিকে দৃষ্টিপাত কর সে দিকেই প্রাচীন ভগ্ন প্ৰাসাদ, প্ৰাচীর এবং দেবমূৰ্ত্তি সমূহের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। উজ্জয়িনীর একস্থানে একটী সিংহদ্বারের ভগ্নাবশেষ অবলোকন করিলাম, উহাকে স্থানীয় লোকে বিক্ৰমাদিত্যের সিংহদ্বার বলিয়া থাকে, ইহা আমাদের নিকট অবিশ্বাস্য বলিয়া প্ৰতীয়মান হইল। আমাদের ধৰ্ম্মান্ধ দেশের লোকের সমুদয়ই বিচিত্র, দেখিলাম বহু নির নারী গন্ধ পুষ্পাদি দ্বারা সেই সিংহদ্বারকেও দেবতারূপে পূজা করিতেছেন!! বিক্রমাদিত্যের না হইলেও হয়ত কোনও পরবর্তী উজ্জয়িনীপতি ইহা নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। । ,