পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘ উড়ে বাতাস পড়ে গিয়েছে, দিগন্তের কোলে শুধু চোখে পড়েছে ঘনঘন ক্ষীণ বিদ্যুতের চমক । গুপ্ৰসাদ প্ৰাণপণে প্রার্থনা করছিল, আজও যেন তাই হয় । নেহাৎ যদি খারাপ হয় তার অদৃষ্ট, শুধু যেন বৃষ্টি পড়ে। বৃষ্টিতে ভিজলেই তার সদিকাশি হবে সন্দেহ নেই, সেই সঙ্গে জ্বর এসে হয়তো শেষ পর্যন্ত দাড়িয়ে যাবে নিমুনিয়ায়, সাতদিনের দিন খটখাটে জ্যোৎসার রাত্রে অজ্ঞান অবস্থাতেই সে মরে যাবে, তবু মাঠে এক ঝড়ের মধ্যে পড়ার চেয়ে তাও অনেক ভালো । আকাশে ধূসর কালো মেঘের দ্রুত সমাবেশের দিকে বারবার তাকাতে তাকাতে দুরুদুরু বুকে প্ৰসাদ জাম পাড়ছিল, দুর থেকে ঝড়ের সোঁ-সো আওয়াজ কানে এলো কারখানার দিক থেকে । ন্যাকড়ায় বাধা জামের পুটুলি পকেটে ভরে সেদিকে পিছন ফিরে প্রসাদ ছুটতে আরম্ভ করল। কোনোমতে পেনোর মাঠ পার হয়ে রেললাইন ধরে স্টেশনে পৌছে যদি আশ্রয় নেওয়া যায়। দুশে গজ দৌড়লেই প্ৰসাদকে হাপরের মতো ইপাতে হয়, সুতরাং হাফ ধরবার আগেই বাতাসের প্ৰথম ধাক্কায় সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। উঠে বসা মাত্র ধুলো আর বালিতে দুটি চোখ যেন তার অন্ধ হয়ে গেল। একটা শুকনো বাকাটির চারা গড়িয়ে এসে তার গায়ে আটকে গেল, শুকনো পাতা তার গায়ে মাথায় ক্ষণিকের জন্য লেপটে থেকে ছিটকে উভে যেতে লাগল, একটা শুকনো ডাল কোথা থেকে এসে লাঠির মতো আঘাত করল তার ঘাড়ে । তারপর নামল বৃষ্টি । ঝড়ের শক্তি আর কলরব যেন দশগুণ বেড়ে গেল। দুটি বুড়ো আঙুল দুকানে ঢুকিয়ে হাতের তালুতে মুখ ঢেকে প্ৰসাদ তখন উপুড়া হয়ে শুয়ে পড়েছে। ঘরের জানােলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে জীবনে কখনো সে ঝড়ের মুক্তি চেয়ে দ্বাখে নি। বড় উঠলে সে ঘরের কোণে মুখ গুজে চোখ কান \