পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জুড়িয়ে যায়। সিনিকের অবস্থা সে পার হয়ে গেছে অনেক দিন, দাম কাষতে আর সে ভুল করে না। চার বছরের বেকার জীবন ধীরেনকে হিসেব ভুলিয়ে দিয়েছে, বাড়ি থেকে চিঠি এলে যে-ভূলের জন্য আজ তার মুখের তীব্ৰ জালা-ভরা হাসি ফুটে ওঠে। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে কিনতে হয় বলে এসব চিঠির যেন দাম নেই। টাকা দিয়ে আরাম যদি মানুষ কিনতে পারে, মেহ কিনতে এত বিতৃষ্ণা জাগে কেন? নির্মলেন্দু বলে, “যা আছে আছে, যা নেই নেই। না জেনে যা পেয়ে কৃতাৰ্থ হয়ে যেতে, স্বরূপটা জানামাত্র বিগড়ে যাবে কেন ? তোমরা, সিনিকেরা, গণ্ডমূর্থ।” মাধবী সম্পর্কে তার নিজের উদাহরণটা অনেকবার উল্লেখ করতে গিয়ে চুপ করে গেছে। তার টাকায় স্থায়ী অধিকারের লোভে মাধবী ধরা দেয় না, তপস্ত করার মতো তাকে ভুলানোর, আরও ভুলানোর, অভিনয় করে। দুদিনের জন্য শুধু তার বিরক্তি এসেছিল, আজ লোভী মাধবীর ছলাকলা আগের মতোই তার চোখে দুপুর বেলার রোদকে জ্যোৎস্না করে দেয়, রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই রীতি মাধবীর ভালোবাসার । অন্য রীতিতে মাধবী ভালোবাসুক, এ-কথা ভাবাও কি বােকামি নয় ? মাসীমা বলে, “বড় রোগ হয়ে গেছিল বাবা, আমার মাথা খাস একটু তাকা শরীরের দিকে ” পিসীমা বলে, “কালীঘাটে তোর নামে একটা মানত করেছি, কাল একবারটি নিয়ে চ আমায়, পূজো দিয়ে মন্দিরে দাড়িয়েই প্ৰসাদী ফুল কপালে ছোয়াব।” আরও অনেকে অনেক কথা বলে । মালীর ছেলে ন্যস্ত ডাক্তারী পড়বে । পিলীর মেয়ে নলিনীর বিয়ে সামনের মাসে । আরও অনেকে অনেক উদ্দেশ্য রাখে। নির্মলেন্দু হাসিমুখে বলে, “নন্তকে আমার মিলে ঢুকিয়ে দেব মাসী। নলিনীর বিয়ে দেব ধীরেনের সঙ্গে।” মালী ও পিসী শুকনো মুখে হাসির জবাবে কোনো রকমে হাসে। মুখের ONS)