পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসতে হবে। আজ আমার অত সময় নেই, মুখের ভাত ফুেলে এসেছি।” “তোমার নাকি আজ ফিট হয়েছিল ?” ‘কে বললে ? ছাতে এক এক ভগবানকে প্ৰণাম করছিলাম, সবাই ভাবল কি যেন হয়েছে। বৌদি ডাকতেই উঠে বসলাম, ফাজলামি করে বললাম, আকাশে একটা আগুনের গোলা দেখে ভয় পেয়েছি। আসলে কি দেখেছিলাম জানো ?” বিস্ময়ে দুচোখ বিস্ফারিত করে চিন্তার চাপে ভুরু কুঁচকে বললে, “কি দেখেছিলাম ? কিছুই তো দেখিনি।” যতীনের কঁাবে হাতের ভর দিয়ে মৃদুস্বরে বলুলে, “দেখিনি তো দেখিনি। বয়ে গেল |’ যতীন অনুভব করল, সে কঁপিছে। সমতল পথে খুব স্পীড়ে চালালে তার গাড়িটা। যেমন কাপে । যতীন স্বাভাবিক গলায় বললে, “ম্যাকগে। ওসব বাজে কথা। এমনি ভাবে ঘুরিয়ে কঁাধে মাথা রাখে। তারপর মিন মিন করে সেই গানটা শোনাও তো। তুমি গাইবে আর আমি শুনিব, আর কেউ না। বড় ভালেমেয়ে তুমি মিগু, বড় ভালো মেয়ে।” বাড়ি ফিরে মৃগনয়ন সবে ভাত খেয়ে ওপরে তার ঘরে গেছে, ঝড়ের বেগে বিশু এসে হাজির ৷ এবাড়িতে তার ছেলেবেলা থেকে যাতায়াত, মৃগনয়নার সঙ্গে অনেক দিনের ভাব। এখন সে এম-এ পড়ে ও মৃগনয়নাকে পড়ায় । কি করে যে এ বন্দোবস্তষ্টা স্থির হল বাড়ির লোকেরা কেউ খেয়ালও করেনি। মৃগনয়নার জন্য একজন মাস্টার রাখার প্রশ্ন উঠেছিল। একদিন দেখা গেল প্রশ্নের মীমাংসা হয়ে গেছে । বিশু ব্যগ্ৰকণ্ঠে মৃগনয়নার মাকে জিজ্ঞেস করল, “কৈমন আছে ?” মা বললেন, “ভালো আছে। তেমন কিছু হয়নি। এই তো ভাত খেয়ে ওপরে গেল।”