পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাবতেই মাধব সে রাত্রে ঘুমোল। তাকে পর্যন্ত ধনঞ্জয় জানান নি যে ভূপতি ছেলের সংখ্যা বাড়িয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছিলেন, মিথ্যাটা তিনি ধরে ফেলেছেন । মিথ্যাকে তিনি মিথ্যা বলে গ্ৰহণ করেন নি, ভূপতির প্রবঞ্চনা ক্ষমা করেছেন, চেপে গেছেন। এদের আতঙ্ক তিনি টের পেয়েছিলেন। স্কুল বন্ধ হলে মাইনেও বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে মরিয়া হয়ে ভূপতি অন্যায়টা করে ফেলেছেন অনুমান করে রাগ হওয়ার বদলে তার অনুকম্পা জেগেছে। কী মহৎ তিনি। ফিরে গিয়ে সর্বাগ্রে মাধব তার পদধূলি গ্ৰহণ করবে। তিনি যে জেনেছেন একথা জানিয়ে ভূপতিকে লজ্জা দেবার স্বাভাবিক ইচ্ছাটা পর্যন্ত দমন করার মহত্ত্বেই ধনঞ্জয় মাধবের কাছে দেবতার চেয়ে বড় হয়ে যান। ভক্তির উত্তাপে মাধবের মোহ ঘন আঠালো হয়ে আসে । দুঃস্বপ্ন দেখে রাত্রে তার দুবার ঘুম ভেঙে গেল। দুবারই শেয়ালের ডাক শুনে প্ৰায় আধঘণ্টা করে” সে জেগে রইল। সকালে চা খেতে গিয়ে দিনের আলোয় মাধবের খেয়াল হল ধনঞ্জয় যাদের যুবতী বলেন ভূপতির মেয়েটি সেই পৰ্যায়ে পড়ে। এক মুহূতের জন্য, শুধু কয়েক মুহুর্তের জন্য মাধবের মনটা একটু খি চড়ে গেল। এর জন্যই কি ভূপতির প্রতি ধনঞ্জয়ের এত দয়া ? স্বাদগন্ধহীন গেয়ে চা-টুকু গিলতে গিলতেই মানসিক বিশ্বাসঘাতকতার প্রক্রিয়াট সে সামলে নিল। ওসব দোব। ধনঞ্জয়ের নেই। তিনি শুধু অধ্যবসায়ী কৃতী পুরুষ নন, চরিত্রবানও বটে। তার শক্রও একথা স্বীকার করবে। ভূপতির মেয়েকে হয়তো তিনি কোনোদিন চোখেও দেখেন নি। হয় তো শুধু শুনেছেন যে ভূপতির একটি যুবতী মেয়ে আছে। যাদের বাড়িতে যুৱতী বোন বা মেয়ে আছে তাদের ধনঞ্জয় একটু প্রশ্ৰয় দিয়ে থাকেন। চাকরি দেবার সময় প্রত্যেকের পরিবারের খবর তিনি খুটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেন। কস্তাদায়গ্ৰস্ত কেউ কোনোদিন তার কাছে