পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারছে না না-শুনে। হঠাৎ সে বলল, “নলিনী আমায় চিঠি লিখেছে। বাৰা। পাঁচটা টাকা পাঠিয়েছে ওর মার জন্য? " | ভূপতি আশ্চর্য হয়ে বললেন, “আন তো চিঠিটা, দেখি কি লিখেছে।” চিঠিখানা প্রথমে দেখল মাধব, সে উপস্থিত থাকতে প্ৰথম কিছু করার অধিকার আর কারো থাকতে পারে না । মস্ত লম্বা চিঠি, মনকে ঢেলে দেবার সব চেয়ে উপযোগী ব্যক্তিগত সস্তা ভুল ভাষায় লেখা বলে স্পষ্ট পরিষ্কার মানেতে আগাগোড়া ঠাসা। সবাই কি ভাবছে আর তার কি হবে ভেবে নলিনীর কান্না পাচ্ছে । বাঙ্গাতলায় পড়ে থেকে মরে গেলেই তার ভালো ছিল। নলিনী আর বঁাচতে চায়না, কিন্তু বেশ আছে সে দিনরাত খাটতে খাটতে মরে যাওয়ার মতো কাজের মধ্যে, তবে কিনা বুক ফেটে যায় মানুষের দুর্দশা দেখলে। নলিনীর দাদা তাকে বলত যে ভিক্ষে করা আর ভিক্ষে দেওয়া দুটোই সমান পাপ। কারো কাছে ভিক্ষে নেবে না বলেই তো সে চলে গেছে। ভিক্ষে নোবেও না, ভিক্ষে দেবেও না। তবে ভিক্ষে দেওয়ার কাজ যে সে করছে সেটা ভিন্ন। নিজে তো আর সে ভিক্ষে দিচ্ছে না, সে শুধু কাজ করছে। কাজ তো তাকে করতে হবে, তাই সে কাজ করছে। কি কাজ করতে হচ্ছে তা সে ভাবতে যাবে কেন ? মানে, নলিনী শুধু কাজটাই করছে, আর কিছু নয়। যাদের সে খেতে দিচ্ছে ইচ্ছে করে দিচ্ছে না। ক্ষমতা থাকলে সে কিছুতেই দিত না । সবাই মরলেও দিত না । দাদার কথা নলিনী পালন করছে। চিঠি পড়ে বোঝা যায়। এই কথাটা বুঝিয়ে লিখতে নলিনী বেশ কঁপরে পড়েছিল। দুলাইনেই তার বক্তব্য স্পষ্ট হয়েছে, কিন্তু সেটা তার বোধগম্য হয়নি, সম্ভব বলে ভাবতেও পারেনি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে লিখেও তার মনে সন্দেহ রয়ে গেছে যে মনের আদর্শ মনে রেখে কাজের জন্য কাজ করার নীতি-কথাটা সে বুঝিয়ে বলতে পেরেছে কিনা এবং ভূপতির মেয়ে বুঝবে কিনা। yiyo